পাতা:পুতুলনাচের ইতিকথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সময় সময় শশীর মনে হয় সে যে গ্ৰাম ছাড়িয়া চলিয়া যাইবে ঠিক করিয়াছিল। সেই জন্য গ্রামের জীবন "এমন অসংখ্য বাধনে তাহাকে বাধিয়া ফেলিয়াছে। এই আকস্মিক জনপ্রিয়তা তাকে এখানে ভুলইয়া রাখিবার জন্য । ভাগ্যের এটা পুরস্কার নয়, ঘুষ । এ তো সে চায় নাই, এ ধরনের সম্মান ও প্ৰতিপত্তি ? জীবনের এই গভীর রূপ তাকে কিছু কিছু অভিভূত করিয়া ফেলিয়াছে সত্য, কিন্তু এ ধরনের সার্থকতা দিয়া সে কি করিবে ? একদিন সকালবেলা পরান ভাক্তারখানায় আসিয়া হাজির । শুষ্ক শীর্ণ মূর্তি, গলায় “কম্বফটার জড়ানো, দেখিয়া দুঃখ হয় । দেখিয়া দুঃখ হইবার অবসর শশীর ছিল না । কত দায়িত্ব তাহার, কত কাজ । শশীর মতো ডাক্তার বন্ধু থাকুতেও এমন রোগা হইয়া গিয়াছে পরান ? কি হইয়াছে পরানের ? ? গলায় ঘা, খাইতে পারে না ? সে তো অনেক দিন আগে হাইস্নাছিল, মতির চিঠি পাইয়া তাহাকে আনিতে কলিকাতা যাওয়ার সময় । সে ঘা এখনো শুকায় নাই ? শশী আশ্চৰ্য হইয়া যায়, বলে যে, গলার ঘা। এতদিন থাকিবার ” কথা নয়-সে যে ওষুধ দিয়াছিল। পরান বুঝি তা ব্যবহার করে নাই ? এতকাল সে ঘুমাইতেছিল নাকি ?” হাসপাতালের ব্যস্ত-সমস্ত ডাক্তারের মতো ভাব শশীর,-যেন তার কাছে এসময় পরানের পর্যন্ত খাতির নাই! কথা বলিতে বলিতে সে একটা “ প্রেসক্রিপশন লিখিতে থাকে। রোগী যে খুব বেশী আসিয়াছে তা নয়, হাসপাতালের ভয় ভাঙিতে গ্রামের লোকের কিছু সময় লাগিবে । জন-সাতেক পুরুষ রোগী শশীর টেবিলের সামনে দাড়াইয়া আছে, আর দরজার বাহিরে ঘোমটা দিয়া বসিয়া আছে একটি কীে, একটি প্রৌঢ় স্ত্রীলোক, বোধ হয়। সে বৌটির শাশুড়ী, পিঠে এক হাত আর সামনে এক হাত দিয়া আধ-জড়ানো ভাবে বৌটিকে ধরিয়া রাখিয়াছে। সম্ভবত দুজনেই পরস্পরের কাছে খুজিতেছে সাহস। এই তো ক-জন রোগী, পরানকে শশী বসিতে বলারও সময় পাইল না ? পরানের পায়ে জুতা নাই, শার্টে ইন্ত্রি নাই, চুলে টেরি নাই বলিয়া নয় তো ? ইয়ািরর কোণে বসিয়া মনে মনে বিশ্ব জয় করিবার সময় য়ে ছিল বন্ধু, যার গ্ৰীতি স্মরণ করিয়া বাদলম্বন উতল দুপুরে কুসুমকে সে ঘর হইতে বিদায় দিয়াছিল, একটা এতটুকু হাসপাতাল স্থষ্টি করার গৌরবে তাকেই শশী আজ এমন অবহেলা করিবে নাকি । টেবিলের এপাশে একটা চেয়ার আছে, তাতে না হোক অনেকটা তফড়িত যে টুলখানা আছে তাতে পরাণকে শশী বসিতে कि । sat