পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
পুনশ্চ

রাত-জাগা পাখী নিস্তব্ধ নীড়ের পাশ দিয়ে
হূহু করে উড়ে যায়,
তার পাখার শব্দে ঘুমন্ত পাখীর পাখা উৎসুক হয়ে ওঠে যে।
বীণায় বাজতে থাকে কেদারা, বেহাগ, বাজে কালাংড়া।
আকাশে আকাশে তারাগুলি যেন তামসী তপস্বিনীর নীরব জপমন্ত্র।
রাজমহিষী বিছানার পরে উঠে বসে।
স্রস্ত তার বেণী, ত্রস্ত তার বক্ষ।
বীণার গুঞ্জরণ আকাশে মেলে দেয় এক অন্তহীন অভিসারের পথ।
রাগিণী-বিছানো সেই শূন্য পথে বেরিয়ে পড়ে তার মন।
কার দিকে? দেখার আগে যাকে চিনেছিল তারই দিকে।
একদিন নিম ফুলের গন্ধ অন্ধকার ঘরে
অনির্বচনীয়ের আমন্ত্রণ নিয়ে এসেচে।
মহিষী বিছানা ছেড়ে বাতায়নের কাছে এসে দাঁড়ালো।
নীচে সেই ছায়ামূর্ত্তির নৃত্য, বিরহের সেই ঊম্মি-দোলা।
মহিষীর সমস্ত দেহ কম্পিত।
ঝিল্লীঝঙ্কৃত রাত, কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ দিগন্তে।
অস্পষ্ট আলোয় অরণ্য স্বপ্নে কথা কইচে।
সেই বোবা বনের ভাষাহীন বাণী লাগল রাজমহিষীর অঙ্গে অঙ্গে।
কখন নাচ আরম্ভ হোলো সে জানে না।
এ নাচ কোন্ জন্মান্তরের, কোন্ লোকান্তরের।
গেল আরো দুই রাত।
অভিসারের পথ একান্তই শেষ হয়ে আসচে এই জানলারই কাছে।
সেদিন বীণায় পরজের বিহ্বল মীড়।
কমলিকা আপন মনে নীরবে বলচে,
ওগো কাতর, ওগো হতাশ, আর ডেকো না।
আমার আর দেরি নেই।