নিবেদন
হিন্দুসমাজে অভিজ্ঞ পুরোহিতের অভাব হইয়াছে। অভাব হইয়াছে কি জন্য, তাহার নিরূপণ করা দুঃসাধ্য নহে। এই ব্যবসায়ে যথোপযুক্ত আয়ের অভাবে পুরোহিত সন্তানগণের মধ্যে যাঁহারা কৃতবিদ্য, তাঁহারা ব্যবসায়ান্তরে মনঃসংযোগ করেন; আর যাঁহারা লেখাপড়া শিক্ষা করিতে পারেন নাই, তাঁহারা যাজকক্রিয়াব্যবসায়ী হয়েন। আরও এক উপসর্গ আছে। পূর্ব্বে হিন্দু-সমাজের পুরোহিতগণের যথেষ্ট সম্ভ্রম ছিল,—হিন্দুসমাজ-যন্ত্রের পুরোহিতগণই যন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু এখন তদ্বৈপরীত্যভাব দাঁড়াইয়াছে। “পুরুৎঠাকুর” রাঁধুনীঠাকুরের বড় অধিক দূরে নহেন।
কেন এমন হইল, কাহার দোষে এমন হইল? দোষ পুরোহিত যজমান উভয়েরই। যজমানের দোষ এই—যে কার্য্য সম্পাদনে তাঁহার অর্থব্যয় আছে, যাহার ক্রিয়া-সাফল্যের উপরে তাঁহার ধর্ম্ম-অর্থ কাম-মোক্ষ চতুর্ব্বর্গের ফল নির্ভর করিতেছে, যে কার্য্যে মন্ত্রের উচ্চারণ বা কার্য্য সঠিকভাবে না হইলে শুভফলের পরিবর্ত্তে অশুভ উৎপন্ন হইবে,—সে কার্য্য যিনি করিবেন, তিনি কেমন লোক, কার্য্যের উপযুক্ত কি না-কাজ জানেন কি না, এ সকল দেখিয়া লয়েন না। দেখিলেও একজন সূপকার ষষ্ঠীপূজা করিতে আসিলে, তাহাকেও যে দক্ষিণা দিবেন, আর একজন জ্ঞানী ব্যক্তিকেও সেই দক্ষিণা দিবেন। পৈতৃক খাতায় ষষ্ঠীপূজার যে দক্ষিণা লেখা আছে, সকলের জন্যই সেই ব্যবস্থা। এই সকল কারণে ভাললোক ব্যবসায় পরিত্যাগ করিয়াছেন। যাহারা মূর্খ—অন্য উপায়ে উদরান্নের সংস্থান করিতে পারে না, তাহারাই যাজক বা পুরোহিত।
পুরোহিতগণের দোষ এই যে, তাঁহারা নিজেই নিজের পসার—নিজের সম্মান নষ্ট করিয়াছেন। বহু পরিশ্রমার্জ্জিত অর্থ কেহ মিছামিছি ব্যয় করিতে ইচ্ছা করে না,—যজমান রক্তোপার্জ্জিত অধিক অর্থ দিয়া ভাল পুরোহিত নিযুক্ত করিবে,—কেন করিবে? ক্রিয়ার ফল পাইতে সূপকারও শ্যামাপূজায় যাহা করিবে, তত্ত্বনিধি মহাশয়ও তাহাই করিবেন,—কৈ,