পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুকুটরায়
৫০৫

এতটা প্রেম শিখিল কোথায়? “কেমনে পিরীতের জ্বালা বুঝিল বনেলা?” এই বন্য রমণী এত প্রেম কি করিয়া শিখিল?

 এই গীতিকথাটিতে রাজাদিগের স্বেচ্ছাচারিতা এবং তাঁহাদের পার্শ্বচরদের রাজার অভিপ্রায়-অনুসারে সম্মতিসূচক ঘাড়নাড়া প্রভৃতির বৃত্তান্ত পাঠ করিয়া মনে হয় যে দেশে পূর্ণ মাত্রায় অরাজকতা বিদ্যমান ছিল। প্রত্যেক দেশেরই সন্নিকটে বন্য বর্ব্বর জাতিরা ঘুরিত এবং উৎপাত করিত। আমাদের ‘সুজলা সুফলা’ বঙ্গভূমি তখনও খুব নিরাপদ ছিল এমন বোধ হয় না।

 আর একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। বঙ্গদেশে ছবি আঁকার প্রথা এত বেশী প্রচলিত ছিল যে ঘটকেরা সর্বদাই নানা দেশের রাজকুমার ও রাজকুমারীদের ছবি লইয়া দেশ-বিদেশে ঘুরিত, এবং অনেক সময় সেই ছবি দেখিয়াই উভয় পক্ষ বিবাহের সম্বন্ধ প্রায় ঠিক করিয়া ফেলিত। শুধু এই গীতিকথায় নয়, অনেক প্রাচীন পালাগানে ও বাঙ্গালা পুস্তকে ইহার ইঙ্গিত আছে। হরিবংশ পুরাণে দৃষ্ট হয় যে বাণের কন্যা ঊষা যখন অনিরুদ্ধকে স্বপ্নে দেখেন―অথচ এই তরুণ যুবক কে, তাহা নির্ণয় করিতে সমর্থ না হইয়া একান্ত ব্যাকুল হইয়া পড়েন, তখন ঊষার সখী চিত্রলেখা ভারতবর্ষের যাবতীয় তরুণ রাজকুমারের ছবি আঁকিয়া তাঁহাকে দেখান। এই ছবিগুলির মধ্যে ঊষা তাঁহার স্বপ্নদৃষ্ট কুমার অনিরুদ্ধের মূর্ত্তি সহজেই চিনিতে পারিয়াছিলেন। এই সকল উপাখ্যান হইতে বেশ বুঝা যায় চিত্রবিদ্যা এদেশে কতটা ব্যাপকতা ও উৎকর্ষ লাভ করিয়াছিল। সাধারণতঃ স্ত্রীলোকেরাই এই চিত্র ও অপরাপর কোমল শিল্পের চর্চা করিতেন। এই বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী ভারতী।

শ্রীদীনেশচন্দ্র সেন। 


 ৬৪