পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০৮
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

তাঁহার হৃদয় জ্যোৎস্নাময় হইয়া উঠিয়াছিল। রাজকুমারের বিপদের কথা শুনিয়া কুমারী অস্থির হইয়া উঠিলেন; তিনি স্বীয় অঙ্গ হইতে হীরকের বলয় ও মণিময় কঙ্কণ প্রভৃতি যাবতীয় অলঙ্কার উৎকোচ দিয়া কারারক্ষকের নিকট কারাগারে প্রবেশাধিকার লাভ করিলেন।

 এই পালাগানটির চিত্রে নানাপ্রকার বিভীষিকাপূর্ণ তান্ত্রিক অনুষ্ঠান ইহার ভীষণতা আরও বাড়াইয়া দিয়াছে। কিন্তু অন্ধকার রাতে একবারটি যদি বিদ্যুৎ চম্‌কাইয়া জগতের প্রসন্ন রূপ উদঘাটন করিয়া দেখায়, তবে তাহা যেরূপ স্মরণীয় হইয়া থাকে―এই বিপদসঙ্কুল জটিল অবস্থাচক্রে বিঘূর্ণিত প্রণয়-কাহিনীতে কুমার ও রাজকন্যার মিলনের দৃশ্যটা তেমনি উজ্জ্বল, তেমনি মনোহর। রাজকুমারী শৃঙ্খলিত রাজকুমারের শৃঙ্খল মোচন করিয়া যেরূপ স্নেহমধুর করুণ রসের উৎস-স্বরূপ অশ্রুপাত করিয়াছিলেন, রাজকুমারও সাগ্রহে সেইরূপ আন্তরিকতার সহিত সেই প্রণয়ের প্রতিদান দিয়াছিলেন। কুমার রাজকন্যাকে একটিবারও জিজ্ঞাসা করিলেন না, এই ভাবে তাঁহাকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টার মধ্যে কুমারীর কোন ভাবী বিপদ্ প্রচ্ছন্ন ছিল কিনা? কুমারী কারাতোরণ খুলিয়া দিলেন, যুবরাজ কৃতজ্ঞচিত্তে ঘোড়ায় আরোহণ করিয়া স্বদেশে চলিয়া গেলেন। যাইবার সময় প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী এবং চন্দ্রসূর্য্যকে শুনাইয়া প্রতিশ্রুতি দিয়া গেলেন যে কুমারীই তাঁহার ধর্মপত্নী, জীবন-মরণে তাঁহার অর্দ্ধাঙ্গিনী থাকিবেন।

 ভাগ্যচক্রের আবর্তনে ভারাইয়া রাজার অবস্থা প্রতিকূল হইল। বীরসিংহ কামাখ্যায় যাইয়া মন্ত্রতন্ত্র শিখিয়া আসিলেন এবং বন্য রাজাকে এবার আবদ্ধ করিয়া বন্য পশুর ন্যায় বন্দী করিলেন। তারপর তিনি মন্ত্রপূত ধূলিমুষ্টি তাহার উপর নিক্ষেপ করিয়া বলিলেন, ‘তুমি চিরকাল পাষাণ হইয়া থাক।’ সেই অমোঘ সন্ধানে রাজার রক্তমাংসের শরীর প্রস্তরে পরিণত হইল।

 ভারাইয়া রাজার ঐশ্বর্য ও রাজতক্ত সমস্তই বীরসিংহের করতলগত হইল! এই সময়ে ঐশ্বর্য্যচ্যুতা ভারাইয়া রাজপত্নী কাঙ্গালিনীর মত যাইয়া বীরসিংহের দরবারে উপস্থিত হইলেন। তাঁহার সেই দীনহীন বেশ