পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আঁধাবন্ধু

 ১৯৩০ সালের ২০শে মার্চ্চ চন্দ্রকুমার দে বুদ্ধু নামক হাজাং শ্রেণীর এক ব্যক্তি ও মঙ্গলনাথ নামক খালিয়াজুড়ির এক ভিক্ষাজীবীর নিকট হইতে এই পালা সংগ্রহ করেন। এই গানের ঠিক অনুরূপ একটি গান পার্ব্বত্য হাজাংদের মধ্যে প্রচলিত আছে। সেই গানটি হয় ত মূল গান; নিম্ন সমতল ভূমির হাজাং ও বাঙ্গালীরা উক্ত গানটি কতকটা নিজেদের ভাষায় রূপান্তরিত করিয়া ইহাকে বর্ত্তমান আকারে পরিণত করিয়াছে। এই গানে চণ্ডীদাসের ও রামীর প্রেম-সম্বন্ধে ইঙ্গিত আছে—চণ্ডীদাসের গানের ভাষা ও আঁধাবন্ধুর ভাষা প্রায় একরূপ,—ভাবেও অনেকটা ঐক্য আছে। সেই বাঁশের বাঁশীর মোহিনী শক্তি যাহাতে অচল জড় জগৎ সচল হয়, যাহা স্বৰ্গ ও পৃথিবীকে এক স্বর্ণসূত্রে বাঁধিয়া ফেলে এবং চন্দ্রোদয়ে বারিধিবক্ষের মত যাহার সুরলহরী রমণীহৃদয়কে আন্দোলিত করিয়া তাহার ললাটে কলঙ্কের টীকা দিয়া তাহাকে কুলত্যাগিনী করায়—সেই বাঁশের বাঁশীর অলৌকিক আকর্ষণের কথা এই পালাটির ছত্রে ছত্রে আছে। ভালবাসার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদন করাই কবির উদ্দেশ্য এবং এই বিষয়েও চণ্ডীদাসের সঙ্গে কবির মিল দেখা যায়। আমার মনে হয় যদিও পালাটি চণ্ডীদাসের পরে লিখিত, তথাপি তাঁহার বহু পরের নহে; চতুর্দশ শতাব্দীর শেষভাগে কিংবা পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমে এই পালাটি বিরচিত হইয়াছিল বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।

 এই গানটিকে গীতি-কবিতার একটি মধুচক্র বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। ইহা রসের মুক্ত পরিবেশন। ভালবাসার অমৃতনিষেকে একটা কলঙ্কের ব্যাপার নিষ্কলঙ্ক,—একটা নীতি-বিগৰ্হিত জিনিষ স্বৰ্গীয় সুষমামণ্ডিত হইয়াছে। বিবাহিত রমণী তাঁহার স্বামীকে বলিয়া কহিয়া পরামুগামিনী হইতেছেন, এরূপ দুর্নীতি কাব্য-সাহিত্যে আর কোথায় আছে? হিন্দুসমাজে