পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বগুলার বারমাসী

 এই পালাটিও শ্রীযুক্ত চন্দ্রকুমার দের সংগৃহীত। ১৯৩০ সালের এপ্রিল মাসে এই পালাটি ময়মনসিংহ জেলার খালিয়াজুরি পরগণার মধ্যবাটী নামক গ্রামনিবাসী নকুল বৈরাগী ও কৃষ্ণরাম মাল নামক দুই ব্যক্তির নিকট হইতে সংগৃহীত হয়। পালাটি ৪২৭ পংক্তিতে সম্পূর্ণ। সুতরাং আকারে ছোট।

 বগুলার বারমাসীতে সামাজিক যে সকল চিত্র দেওয়া আছে, তাহা চণ্ডীদাসের যুগের; স্ত্রীলোকের এতটা স্বাধীনতা পরবর্ত্তী ব্রাহ্মণ্য যুগের রুচিসঙ্গত ছিল না; কবি তাঁহার রচনা ফেনাইয়া দীর্ঘ করেন নাই, বরং তাঁহার লেখা কিছু অতিরিক্ত পরিমাণে সংক্ষিপ্ত। অনেক ঘটনা কবি ছাড়িয়া দিয়া গিয়াছেন, গল্প-ভাগের জন্য যেটুকু দরকার সেইটুকু রাখিয়া তিনি অপরাংশ ছাঁটিয়া ফেলিয়াছেন―চণ্ডীদাসের যুগে কাব্যের এইরূপ ইঙ্গিত অনেক সময় দেওয়া হইত। তাঁহার “এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা, কেমনে আইলা বাটে” ছত্রের পরেই “আঙ্গিনার মাঝে বধূয়া ভিজিছে দেখে যে পরাণ ফাটে,” প্রথম পংক্তি নায়ককে সম্বোধন করিয়া বলা হইয়াছে, কিন্তু দ্বিতীয় পংক্তি সখীদের সম্বোধনে উক্ত;―কবি একই গানে এইরূপ দুই তিন ব্যক্তিকে সম্বোধন করিয়াছেন―অথচ তাহা স্পষ্ট করিয়া বলেন নাই, শুধু কথার ইঙ্গিত দিয়া গিয়াছেন মাত্র। হয়ত তাঁহার গান অভিনীত হইত, গান করিবার সময় রাধা একবার কৃষ্ণকে ও একবার সখীকে এবং আরবার হয়ত জনান্তিকে কথা বলিয়াছেন; অভিনয়-কালে তাহা স্পষ্ট হইয়া উঠিত, এখন কবিতা পড়িবার সময় সেই ইঙ্গিতের সাহায্যে একটু একটু করিয়া অবস্থাগুলি হৃদয়ঙ্গম করিতে হয়। শ্যামরায়, মহিষাল বন্ধু, ধোপার পাট―প্রভৃতি পালাগুলিতেও এই ভাবের ইঙ্গিত দৃষ্ট হয়—সকল কথা কবি খুলিয়া লেখেন নাই―অনেক ঘটনা ও অবস্থা পাঠককে বুদ্ধি-বলে আবিষ্কার করিয়া―সমস্ত পালাটির অর্থ উপলব্ধি করিতে হইবে। বগুলার বারমাসীতে বণিক্-কন্যার