পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৩৪
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

 মহীপালের পালাটি যে এখনও লুপ্ত হয় নাই, তাহার বিশ্বাসজনক প্রমাণের কথা আগেই কিছু বলিয়াছি। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার এবং সংস্কৃত বোর্ডের প্রেসিডেণ্ট পণ্ডিত কোকিলেশ্বর শাস্ত্রী, এম. এ. আমায় বলেন যে ছেলেবেলা তাঁহাদের রঙ্গপুরস্থ কাকিনা গ্রামে একজন বৃদ্ধ গায়কের নিকট এই পালাটি তিনি অনেকবার শুনিয়াছেন, যে হেতু তাঁহার পিতৃদেব মহীপালের গানের বিশেষ অনুরাগী ছিলেন এবং প্রায়ই নিজ বাড়ীতে উহা গাওয়াইতেন। দুঃখের বিষয় সে পালাগায়কের এখন মৃত্যু হঈয়াছে এবং শাস্ত্রী মহাশয় দেশ ছাড়িয়া দূরে বাস করার দরুন এইটুকু সংবাদ দেওয়া ছাড়া আমার আর কোন সাহায্য করিতে পারেন নাই।

 ভারতের একজন সুবিখ্যাত রাজা সম্বন্ধে এই পালাটি লোকমুখে কিংবদন্তীর সহিত জড়াইয়া যে আকারই ধারণ করুক না কেন, ইতিহাসের চর্চ্চা যাঁহারা করেন। তাঁহাদের কাছে তাহার মূল্য অনেক। সাধারণ লোকেরও এ পালা সম্বন্ধে আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক।

 কিন্তু পালাটির এই সামান্য কয়টি লাইন পাইয়া অবশ্য সে বিপুল কৌতুহল তৃপ্ত হইবার নহে। বহু তাম্রশাসনে কীর্ত্তিত রাজা মহীপালের জীবনের বিশেষ কিছুই আমরা জানিতে পারি নাই। তাঁহার জীবনের যে ঘটনার উল্লেখ ইহাতে আছে, সত্য হইলে তাহা তাঁহার কলঙ্ক বলিয়াই গণ্য হইবে। বৃন্দাবন দাস ষোড়শ শতাব্দীতে যে পালার কথা বলিয়াছিলেন সে পালা ইহা নহে। সে পালার সামান্য একটু অংশ হইতে পারে। পালাটি একটি বড় ঐতিহাসিক যুগের আভাস দিতেছে, এজন্য ২৬ পঙ্‌ক্তির ক্ষুদ্র একটি পালা সম্বন্ধে এতগুলি কথা লিখিলাম। আমার বিশ্বাস পালাটি এখনও উত্তরবঙ্গে আছে। আমার শরীরের বর্ত্তমান অবস্থা খারাপ না হইলে আমি নিজে গিয়া পালাটি উদ্ধার করিয়া আনিতেও পারিতাম। কিন্তু সে উপায় যখন নাই তখন আমায় অপরের ভরসাতেই ইহার জন্য অপেক্ষা করিতে হইবে। দুঃখের কথা এই যে পালাগানগুলি অতি দ্রুতভাবে এদেশ হইতে লোপ পাইতেছে। এখনও যদি লুপ্ত না হইয়া থাকে, আর কয়েক বৎসরের মধ্যেই সমস্ত মহীপালের গানটি লুপ্ত হইতে পারে।