পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬৪
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

মুগ্ধ হইলেন এবং তিনি ক্রমশঃ চাঁদরায়ের এমন বশীভুতা হইয়া পড়েন যে চাঁদরায় একমাত্র তাঁহারই সাহায্যে সেই জমিদারকে নিদ্রিত অবস্থায় হত্যা করিয়া তদীয় ছিন্নমুণ্ড নবাব-সম্মুখে প্রেরণ করেন। তখন চাঁদরায়ের পুত্র সোণারায়ের জন্ম হয়। অনেককাল পর্য্যন্ত উক্ত বেগম চাঁদরায়ের তত্ত্বাবধানেই বাস করিতেছিলেন। ক্রমে মনােমালিন্যের সূত্রপাত হইলে চাঁদরায় তাঁহার রক্ষণাবেক্ষণের ভার গ্রহণে অসম্মতি প্রকাশ করেন। এই বেগমের গর্ভজাতা এক কন্যা আবার সোণারায়ের রূপ দেখিয়া তাহাকে ভালবাসে। সোণারায় অনেক সময়ে এই বেগমের কাছেই থাকিতেন। বেগম ক্রুদ্ধা হইয়া একদা সোণারায়কে বন্দী করেন এবং বন্দিশালায় তাহাকে শৃঙ্খলিত করিয়া বুকে পাষাণ চাপাইয়া রাখেন। প্রবাদ আছে সোণারায় শেষে প্রহরীকে বহুমূল্য রত্নাঙ্গুরী উপহার দিয়া মুক্তিলাভ করেন। আবার লৌকিক প্রবাদের আর এক শাখা আরও করুণ। বেগম-দুহিতা মাতার এই ব্যবহারে অত্যন্ত দুঃখিত হইয়া বারবার মাতাকে বাঞ্ছিতের মুক্তিদান করিতে অনুরোধ করেন।

 কিন্তু বেগম তাহাতে স্বীকৃত হন নাই। তখন বেগম-দুহিতা একরূপ পাগলের মত হইয়া যান ও একদা গভীর নিশিথে বহুমূল্য বস্ত্রালঙ্কারে শোভিতা হইয়া একাকিনী সেই বন্দিীশালায় উপস্থিত হইয়া গায়ের গহনা এক এক করিয়া খুলিয়া দিয়া প্রহরীকে বিস্ময়াভিভূত করিয়া বন্দিীশালার অভ্যন্তরে উপস্থিত হন। অতঃপর এই প্রতিশ্রুতিতে সোণারায় মুক্তিলাভ করেন যে তিনি মুক্ত হইয়া বেগম-দুহিতার পাণিগ্রহণ করিবেন। মুক্তি পাইয়া সোণারায় প্রতিশ্রুতি-ভঙ্গ করেন। বেগম-দুহিতার কোমল হৃদয় এই নিদারুণ মর্ম্মপীড়ায় একেবারে ভাঙ্গিয়া পড়ে। প্রবাদ আছে শেষে তিনি সেই নিদারুণ আঘাত সহ্য করিতে না পারিয়া পাগল হইয়া যান। কোনো কোনো শাখায় বর্ণিত আছে তিনি আত্মহত্যা করেন। কিন্তু ছড়াগুলিতে উল্লিখিত বৃত্তান্ত স্পষ্ট ধরা পড়ে নাই, মাঝে মাঝে সত্য ঘটনার ছায়া পড়িয়াছে মাত্র।

 (১) মাসিক আরতি পত্রিকার পুরাতন এক সংখ্যা, (২) ময়মনসিংহের সৌরভ পত্রিকার জন্য প্রেরিত শ্রীযোগেন্দ্র ভট্টাচার্যের একটি অপ্রকাশিত