পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬৬
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

ইহাকে ইংরাজীতে refrain কহে। এই ছড়াটিতে বহুস্থানে এইরূপ পুনরুক্তি আছে, যথা ‘সোণারায় সোণারায় কি কর বসিয়া।’ বলা বাহুল্য পাড়াগাঁয়ের এই সুরটি বাঙ্গালীর নিকট বড়ই মর্ম্মস্পর্শী ও মধুর। লৌকিক সংস্কারে ঐতিহাসিক ঘটনা যে কিরূপ চালডালমেশানো খিচুড়ীর মত একটা জিনিশ হইয়া দাঁড়ায়, এই ছড়াটিতে তাহা প্রণিধান করিবার যোগ্য। এ কথা যদি সত্য হয় যে, কোন প্রতিহত-প্রেমিকার ষড়যন্ত্রে সোণারায় বন্দী হইয়াছিলেন, তবে অকস্মাৎ পীরের আবির্ভাব-জনিত নায়কের কারাবাসের কথা কিরূপে আসিল তাহা বোধগম্য নহে। ইতিহাসের উপকরণগুলি যাদৃচ্ছাক্রমে ব্যবহার করিয়া লৌকিক কল্পনা এই ছড়াটি প্রস্তুত করিয়াছিল। বঙ্গের পল্লীতে পল্লীতে বঙ্গাপল্লী-নায়কের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিবরণ এইরূপ ছড়াগানে প্রাপ্ত হওয়া যায়। ইটপাথর কুড়াইয়া যেরূপ মন্দির নির্ম্মিত হয়, এইরূপ উপাদান কুড়াইয়া আমাদিগকে সেইরূপ দেশের ইতিহাস সঙ্কলন করিতে হইবে। সুতরাং কিছুই উপেক্ষনীয় নহে।

  এই ছড়াটির সম্বন্ধে চন্দ্রকুমারবাবু আরো যে দুএকটি কথা লিখিয়াছেন তাহা এখানে উদ্ধৃত করিয়া আমরা ভূমিকার উপসংহার করিতেছি।

 “এগুলি অন্যান্য পালাগানের মত সুরে গান হয় না। যাহা শুনিলাম তাহা এক রকম সুর ধরিয়া আবৃত্তি করা মাত্র। সে রকম সুরকে গানের সুর বলা চলে না, ছড়ার আবৃত্তি মাত্র।”

শ্রীদীনেশচন্দ্র সেন