পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

হইল, তখন বড় দুঃখে তাহার মুখে যে হাসি ফুটিয়াউঠিল, কৃষক বালকের একান্ত দৈন্য সত্ত্বেও সেই হাসিতে তাহার ধর্ম্মভীরুতা ও পিতৃ-স্নেহ জাজ্জ্বল্যমান হইয়াছে। আমরা সাহস করিয়া বলিতে পারি, তথা-কথিত সভ্য জগতের কোন কৃষকের চিত্রে এই স্বৰ্গীয় জ্যোতি নাই। তার পর নির্জ্জন নদীর ঘাটে মইষাল সুজাতীর সাক্ষাৎ এবং আলাপে প্রথম যৌবনে কন্যার মুখে যে রক্তজবার রাগ ফুটিয়া উঠিয়াছে, তাহাতে অতি অল্প কথায় সমস্ত দৃশ্যটি উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়াছে। পুর্ব্বরাগের পর তরুণতরুণীর মিলনের জন্য যে চিত্তের আকুলি ব্যাকুলী কবি বর্ণনা করিয়াছেন, তাহা ভবৈশ্বর্য্যময় বৈষ্ণব কবিতা স্মরণ করাইয়া দিবে। ছয়মাস পরে মুক্তি পাইয়া অবস্থাচক্রের আবর্ত্তনে নানা সুখ দুঃখ অতিক্রম করিয়া ডিঙ্গাধর যখন অর্থসম্পদের অধিকারী হইল, তখনও সে সুজাতী কন্যার পূর্ব্বের অনুরাগ অক্ষুন্ন আছে কিনা, ইহার পরীক্ষা না করিয়া সোজাসুজি-ভাবে বলরামের বিধবার নিকট বিবাহ প্রস্তাব পাঠাইল না। ডিঙ্গাধরের চরিত্রে সর্ব্বদা এইরূপ একটা সংযমের ভাব দৃষ্ট হয়। ছদ্মবেশী ডিঙ্গাধর বলরামরে গৃহে উপস্থিত হইয়া সুজাতী কন্যা ও তাহার বিধবা মাতার যে দুর্দ্দশা প্রত্যক্ষ করিল তাহার চিত্র অত্যন্ত মর্ম্মস্পর্শী হইয়াছে। আষাঢ়িয়া মণ্ডলের চিত্র অপ্রাসঙ্গিক হইলেও ইহাদ্বারা কবি ব্যয়কুণ্ঠ কুসীদজীবীর একটা নিখুঁত ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কিত করিয়াছেন। রসুয়াঘটকের দ্বারা টাকা পাঠাইয়া, আষাঢ়িয়ার ঋণপরিশোধ এবং বাড়ী খালাস, এবং ডিঙ্গাধরের পরিচয় না দিয়া বিবাহের প্রস্তাব উত্থাপন, বিবাহ সম্বন্ধে সুজাতী কন্যার সর্ত্ত এবং পরিশেষে দুষ্মবেশী ডিঙ্গাধরের স্বরূপপ্রকাশ প্রভৃতি ঘটনা কবি অতি সুকৌশলে বর্ণনা করিয়াছেন। দুর্বৃত্ত মঘুয়ার কাহিনী এবং দ্বিতীয় পালায় বর্ণিত কাঙ্গুরাজার অদ্ভুত বিচার অনেকটা ভেলুয়ার পালার হিরণসাধুর বিবরণের অনুরূপ। পালাটি সম্পূর্ণভাবে সংগৃহীত না হওয়ায় গল্পের উপসংহার ভাগ সম্বন্ধে কোনও কথাই বলিতে পারিলাম না। তবে আখ্যায়িকার গতি পর্যালোচনা করিয়া ইহা অনুমান করা যাইতে পারে, দুর্বৃত্ত মঘুয়া অথবা নৃশংস কাঙ্গুরাজার শত অত্যাচারেও সুজাতী কন্যার নারীত্বের মর্য্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় নাই। পালাগানের প্রায় প্রত্যেকটীর উপসংহারে নায়িকার চিত্র গৌরবান্বিত হইয়াছে, এরূপ দেখা যায়। এই পালাটিতে ও সেই সাধারণ