পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পালাগানোক্ত অর্ণব যান ও চিত্রের কথা।

 এই খণ্ডে যে সকল নর-নারীর শুধু কালীর রেখায় আঁকা ছবি দেওয়া গেল, তাহা শ্রীযুক্ত বিশ্বপতি চৌধুরী এম, এ—অঙ্কিত। তিনি চক্ষুরোগে ভুগিতেছিলেন, তথাপি আমার কার্য্য অশেষ অনুরাগ দেখাইবার আগ্রহে অতি অল্প সময়ের মধ্যে আটখানি ছবি আঁকিয়াছেন, এজন্য বোধ হয় তাঁহার চক্ষু রোগ বাড়িয়া গিয়াছে। আমি তজ্জন্য কতকটা লজ্জিত ও মর্ম্মাহত হইয়া তাঁহার প্রতি আমার স্নেহ ও কৃতজ্ঞতা জানাইতেছি, যেহেতু তিনি সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ ভাবে এই শ্রম স্বীকার করিয়াছেন। শুধু কালীর রেখাপাতে আঁকা হইলেও ছবিগুলিতে শিল্পী যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন, আশাকরি তজ্জন্য তিনি প্রশংসা অর্জ্জন করিবেন।

 শ্রীযুক্ত আশুতোষ চৌধুরী আমাদের অন্যতম পালাগান সংগ্রাহক। ভেলুয়া, কাঞ্চন মালা, মহুয়া, মইষালবন্ধু প্রভৃতি কাব্যে যে সকল ডিঙ্গিনৌকা ও জাহাজের বিবরণ পাওয়া যায়, তাহাদের অধিকাংশই চট্টগ্রামের বালামী নামক এক শ্রেণীয় হিন্দুদের দ্বারা প্রস্তুত হইত। ইহারা এখনও জাহাজ প্রস্তুত করিয়া থাকে। প্রচীন বঙ্গসাহিত্যে নৌকা ও জাহাজের বহুল বিবরণ আছে, সুতরাং বালামীদের হাতের কাজের কতকটা নমুনা দেওয়ায় পালাগানাগুলি আরও চিত্তাকর্ষক হইবে, এই ধারনায় আমি আশুবাবুকে চট্টগ্রামে নির্ম্মিত প্রাচীন ও আধুনিক জাহাজের ফটোগ্রাফ পাঠাইবার জন্য অনুরোধ করিয়া চিঠি লিখিয়াছিলাম। তিনি এজন্য প্রাণান্ত পরিশ্রম করিয়া আমাকে অনেকগুলি ফটোগ্রাফ পাঠাইয়াছেন—তন্মধ্যে বিগত মহাযুদ্ধের সময় বালামীরা যে সকল সুলুপ তৈরী করিয়াছিল, তাহাদেরও কয়েকটি নমুনা আমরা পাইয়াছি। আশুবাবু এই ফটোগ্রাফ সংগ্রহের চেষ্টায় একবার ঝড়ে নৌকাডুবি হইয়া মরিবার পথে দাঁড়াইয়াছিলেন।

 বালমীরা কর্ণফুলী নদীর তীরবাসী যোগী জাতীয়। সম্ভবতঃ সমুদ্রযাত্রার নিষেধ না মানিয়া তাহার। জাহাজ-নির্ম্মান করে, কিম্বা এক সময়ে তাহারা নাথ-সম্প্রদায়-ভুক্ত ছিল, এজন্য তাহারা “বাহিরিয়া” বলিয়া উক্ত হইয়া