পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৯৫

—এই শব্দের অর্থ বোধ হয়—‘সমাজ বহির্ভূত’ অর্থাৎ ইহাদের জল আচরণীয় নহে।

 প্রাচীন বঙ্গসাহিতো—বিশেষ করিয়া এই পল্লী-গাথা-সাহিত্যে আমরা সমুদ্র-যাত্রা ও নানা প্রকার ডিঙ্গি নির্ম্মাণের বহুল উল্লেখ পাইতেছি। ১৫৭৫ খৃঃ বংশীদাস তাঁহার মনসার ভাসানে জাহাজ নির্ম্মানের বিশদ বিবরণ দিয়াছেন। বংশীদাস ময়মনসিংহ বাসী ছিলেন। ব্রহ্মপুত্র, কংস, ধনু, ভৈরব—প্রভৃতি নদের উদ্দণ্ড লীলায় লীলায়িত এই দেশের সঙ্গে বহির্জগতের জলপথে যে বিস্তৃত বানিজ্যের কারবার ছিল, তাহার নিদর্শন এই সকল পালা-গানের পত্রে পত্রে পাওয়া যায়।

 যে সমস্ত জাহাজের উল্লেখ এই গাথা-সাহিত্যে পাওয়া যায়—তাহাদের অধিকাংশই যে চট্টগ্রামের বন্দরে, হালিসহর, পতেঙ্গা, ডবলমবিং প্রভৃতি কর্ণফুলী-নদীর তীরস্থ পোতাশ্রয়ে নির্ম্মিত হইত, তাহাতে সন্দেহ নাই। খৃষ্টীয় তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে চট্টগ্রামের জাহাজ বালী, যাবা, সুমাত্রা, কোচিন, ও আরব-সাগরে বানিজ্যার্থে যাইত। কলিঙ্গ দেশের লোকের সহযোগে যে সকল বাঙ্গালী শিল্পী যাবার ‘বরোবদর’ মন্দির ও বালীর প্রম্ববনম্ নামক স্থানে নানারূপ হিন্দু দেবদেবীর মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, চট্টগ্রামের অর্ণব-যানই তাহাদের যাতায়াতের পথ প্রশস্ত করিয়াছিল। এমন এক দিন ছিল, যখন তুরস্কের সুলতান আলেকজেন্দ্রিয়া-বন্দরের জাহাজ-নির্ম্মান-পদ্ধতি মনোনীত না করিয়া তদীয় অর্ণবপোত-নির্ম্মানের জন্য চট্টগ্রামের বালামীদিগকে নিযুক্ত করিতেন। মহিন্দ নামক চৈনিক পর্য্যটকের প্রদত্ত বিবরণ হইতে আমরা ইহা জানিতে পারিয়াছি। দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ্নে ইদ্রিস নামক সুবিখ্যাত লেখক চট্টগ্রামকে “কর্ণবুল” বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। এই “কর্ণ-বুল” যে কর্ণ-ফুলী নামের অপভ্রংশ, তাহাতে সন্দেহ নাই। চট্টগ্রামের সঙ্গে আরবদেশের বানিজ্য-সম্পর্কের উল্লেখ করিয়া পর্ত্তুগিজ লেখক ডি, বরোস অনেক কথা লিখিয়াছেন। আরব হইতে চট্টগ্রাম-নির্ম্মিত অর্ণবযানে আরোহন করিয়া বহু পীর, আউলিয়া ও দরবেশ সে দেশে আসিয়াছিলেন, তাহায় প্রমাণ আছে। ১৪০৫ খৃঃ অব্দে চেংহো নামক মন্ত্রীকে চীন-সম্রাট্ চট্টগ্রামের সঙ্গে বানিজ্য