পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

ঘটিত কলহের মীমাংসার জন্য তদ্দেশে পাঠাইয়াছিলেন। ১৪৪৩ খৃঃ অব্দে ইবন বটুটা চট্টগ্রামের অর্ণবযানে যাবা এবং চীন প্রভৃতি স্থানে পর্য্যটন করিয়াছিলেন এবং ১৫৫৩ খৃঃ অব্দে গোয়ার পর্ত্তুগীজ শাসন-কর্ত্তা নমু-ডি-চোনা তদীয় সেনাপতি ডি, মান্নাকে দুইশত সৈন্য এবং পাঁচখানি জাহাজ সহ চট্টগ্রামে কয়েকটি বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করিবার জন্য প্রেরণ করিয়াছিলেন। অতি প্রাচীন কাল হইতে চট্টগ্রামের অর্ণব-পোতের গৌরবের নানা প্রমাণ ও নিদর্শন পাওয়া যায়। চাঁদ সদাগরের কীর্ত্তিকথা চট্টগ্রামে সমধিক পরিমাণে প্রচারিত। সম্প্রতি (১৮৭৫ খৃঃ অব্দের পর হইতে) ইউরোপীয় বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে প্রস্তুত জাহাজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অসমর্থ হইয়া চট্টগ্রামের সেই গৌরব ক্ষুণ্ণ হইয়াছে।

 মুসলমান-শাসনের শেষ অধ্যায়েও চট্টগ্রামের অনেক বিখ্যাত বানিজ্যব্যবসায়ী জাহাজ-অধিকারীদের নাম পাওয়া যায়। রঙ্গ্যা বছির, গুমানী মালুম, মদন কেরাণী ও দাতারাম চৌধুরী প্রভৃতি বিখ্যাত পণ্যব্যবসায়ীর মধ্যে কাহারও কাহারও শতাধিক অর্ণবপোত ছিল। পঞ্চদশ শতাব্দীতে যখন পর্ত্তুগিজ জলদস্যুরা (হার্ম্মাদগণ) বঙ্গোপসাগরে উপদ্রব করিত—চট্টগ্রামের বণিকদিগের জাহাজ লুটপাট করিয়া তাহাদিগের প্রাণ নাশ করিত, তখন বণিকেরা দলবদ্ধ হইয়া বহু ‘সুলুপ’ লইয়া শত্রুদের বিরুদ্ধে দাঁড়াইতেন; এই পোতসঙ্ঘকে “সুলুপ-বহর” নামে অভিহিত করা হইত; এখনও চট্টগ্রামের নিকট ‘সুলুপ বহর’ নামক একটি স্থান আছে। এই আত্মরক্ষণশীল বণিক-সম্প্রদায়ের মধ্যে যিনি যুদ্ধে বিশেষ কৃতিত্ব দেখাইতেন, তাঁহাকে “বহরদার” উপাধি দেওয়া হইত।

 পূর্ব্বেই উল্লিখিত হইয়াছে যে চট্টগ্রামের অর্ণবযানগুলির উল্লেখ আমাদের পল্লীগাথাগুলির অনেকটির মধ্যেই পাওয়া যায়। ‘মইষাল বন্ধু’তে চট্টগ্রামের “মেঘুয়া” নামক এক দুষ্ট বণিকের বহু অর্ণবযানের উল্লেখ পাওয়া যায়। ‘ধোপার পাটে’ তমসা গাজির বালামী জাহাজ লইয়া চাউলের বিস্তৃত কারবারের কথা লিখিত আছে। ভেলুয়ার অনেক স্থলেই অর্ণবযানের উল্লেখ আছে। এই উপাখ্যানটিতে বণিকদিগের এক অদ্ভুত রীতির বিবরণ পাওয়া যায়—বণিকেরা কখন কখনও বঙ্গোপসাগরের মধ্যে তাঁহাদের অর্ণবযান লইয়া