পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৭

তাঁহাদের স্বগণসহ মহাসমারোহে বর ও কন্যার পরিণয়কার্য্য সমাধা করাইতেন। সম্প্রতি বিলাতে প্রণয়ী-যুগ্মের মধ্যে এইরূপ একটা খেয়ালের দৃষ্টান্ত সংবাদ-পত্রে পড়া গিয়াছে।

 “গৌরমণি মাঝির গান” এবং “স্বরূপ জেলের বারমাসী” দুইটি ক্ষুদ্র পালা গানে চট্টগ্রামের “গধু নৌকায়” সমুদ্রযাত্রী মৎস্যজীবিগণের মৎস্য ব্যবসায়ের বিবরণ আছে। এই দুইটি গীতি পরে প্রকাশিত হইবে।

 আমরা নিম্নে এই সকল অর্ণবপোতের কিছু কিছু বিবরণ লিপিবদ্ধ করিতেছি।

 ২। বালাম নৌকা।—এখন আমরা যে, ‘বালাম’ চাউল আহার করি, তাহা এই ‘বালাম’ নৌকায় আসিত বলিয়া তাহার এরূপ নামকরণ হইয়াছে। বালাম ডিঙ্গিই বাঙ্গলার অন্যতম সুপ্রাচীন অর্ণবযান। ইহা সাধারণতঃ পা’লের দ্বারা পরিচালিত হইত; ইহাতে ১৬টি দাঁড় থাকে। বালামী নামক কর্ণফুলীর তীরবাসী যোগী-সম্প্রদায় কর্ত্তৃক এই জাতীয় অর্ণবযান প্রস্তুত হইয়া থাকে। বর্ত্তমান সময়ে ও বালাম অর্ণবপথে ব্রহ্মদেশের আরাকান, কাইক্‌ফু প্রভৃতি বন্দরে ধান লইয়া বাণিজ্যার্থে গমন করে। সমুদ্রগামী বালামকে ৫০ টন (১৪০০ মন) পর্য্যন্ত মাল বহনের লাইসেন্স দেওয়া হইয়া থাকে। কিন্তু এখনও এই শ্রেণীর অর্ণবযান এত বড় হয়, যে তাহাতে ২।৩ শত টন মাল বহন করিতে পারে।

 ২। ‘গধু’ নৌকা—ইহাও সমুদ্রগামী সুপ্রাচীন অর্ণব যান; ইহা দৈর্ঘ্যে ২০।২৫ ফিট, বেধ ২” কি ২ ১/২” ইঞ্চি এবং পাশ ১৮” ইঞ্চি ব্যাপক বহু সংখ্যক “চাপ” বা বাঁক। কাষ্ঠ খণ্ড একত্র করিয়া রচিত হইয়া থাকে, ইহার তলানি (keel) অর্দ্ধচন্দ্রাকৃতি। ‘চাপ’ গুলি পেরেক দ্বারা আবদ্ধ হয় না;—গল্লাক নামক এক জাতীয় শক্ত বেতের দ্বারা জোড়া দেওয়া হইয়া থাকে। চাপের দুইদিকে “শ্যামা” নামক ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। সেই ছিদ্রপথে বেত প্রবেশ করাইয়া জোড় দেওয়া হয়—দুই খানি চাপের মধ্যে যে কিঞ্চিৎ ফাঁক থাকে, তাহা উলুখড়ের শক্ত দড়ির দ্বারা বুজাইয়া দেওয়া হয়। শ্যামার (ছিদ্রের) ফাঁক পাট, তুলা ও ধূনা দিয়া বদ্ধ করা হয়। এই বেতের বাঁধা নৌকার জোড় এত শক্ত হয় যে ভয়ানক