পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

ঝড় তুফানেও তাহাতে বিন্দুমাত্র জল প্রবেশ করিতে পারে না। নৌকার জোড় গুলি চৈত্র মাসে খুলিয়া ডাঙ্গায় রাখা হয়, ভাদ্র মাসে জোড় দিয়া নৌকাগুলি পুনরায় সমুদ্রের যাতায়াতের জন্য প্রস্তুত করা হয়। চারপাঁচ মাসের খাদ্য দ্রব্য লইয়া “গধু” বঙ্গোপসাগরের লাক্ষ্মাদ্বীপ, মালদ্বীপ, সোনাদিয়া, লালদিয়া, রাঙ্গাবালী প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ সমূহে মৎস সংগ্রহ করিয়া বেড়ায়। শুক্‌না মাছ (হুট্‌কী) প্রচুর রূপে সংগৃহীত হয়—হুট্‌কীর অনেক নাম আছে যথা:—(১) বদরের ছুরি (২) ঘোয়রা (৩) ফাইস্য। (৪) লইট্যা (৫) রিশ্যা (৬) পাল্‌কা (৭) চাগাইছা। যখন এই সকল বিভিন্ন হুট্‌কী মাছের বিশাল ভাণ্ডার লইয়া ‘গধু’ চট্টগ্রামের বন্দরে ফিরিয়া আসে, তখন জেলেদের আত্মীয় স্বজন ঢোল, দগড়া, শানাই প্রভৃতি বাদ্য যন্ত্র উচ্চ রোলে বাজাইয়া প্রত্যাগত মৎস্যজাবিগণকে মহাসমারোহে অভিনন্দিত করিয়া থাকে। কর্ণফুলী নদী শত শত “গধুর” অভিনন্দন-জনিত বিপুল কলবাদ্যে তখন ধ্বনিত হইয়া—এক অদ্ভুত দৃশ্যের অবতারণা করে।

 ৩। সারেঙ্গ৷—একটি সুবৃহৎ পার্ব্বত্য বৃক্ষকে খুঁড়িয়া এই শ্রেণীর নৌকা তৈরী করা হয়, ইহাতে কোন জোড়া-তালি নাই।

 ৪। সাম্পান—ইহা চীন দেশীয় নৌকার অনুকরণ—দেখিতে অনেকটা হাঁসের মত। ইহা শুধু মাল বহনের জন্য।

 ৫। কোঁদা—ইহা রেড ইণ্ডিয়াণদের ‘কেনিও’ নৌকার মত—ইহা তরঙ্গের মধ্যে চলিতে পারে না—একস্রোতা নদীর মধ্যে লগি দিয়া ঠেলিয়া কোঁদা চালাইতে হয়।

 ৬। সুলুপ—বালাম নৌকাই পর্ত্তুগিজ অর্ণবযানের প্রভাবে সুলুপের আকৃতি ধারণ করিয়াছে। এই অর্ণবযানের কয়েকখানি চিত্র এই পুস্তকে দেওয়া হইল।

 ঊণবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে চট্টগ্রামে রামমোহন দারোগা, পিরু সদাগর নছুমালুম প্রভৃতি অনেকেরই অর্ণবযান ছিল। রামমোহনের জাহাজ স্কটলণ্ডের টুইড (Tweed) বন্দর পর্য্যন্ত সফর দিয়া আসিয়াছিল।

 বিগত মহাযুদ্ধর সময় চট্টগ্রামে আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে অনেক গুলি জাহাজ নির্ম্মিত হইয়াছে। বালামীরাই এই সকল জাহাজ নির্ম্মান