পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধোপার পাট

ঘর কইলাম বাহির রে বন্ধু পর কইলাম আপন[১]
অবলার কুলভয় হইল দূষমণ॥
কিসের কুল কিসের মান আর না বাজাও বাঁশী।
মনপ্রাণে হইয়াছি তোমার শ্রীচরণের দাসী॥
একটু খানি থাকরে বন্ধু একটু খানি রইয়া।
কাচা ঘুমে বাপ মাও না পড়ুক ঘুমাইয়া[২]
আসমানেতে কাল মেঘ ডাকে ঘন ঘন।
হায় বন্ধু আজি বুঝি না হইল মিলন॥১০
বৃষ্টি পড়ে টুপুর টুপুর বাইরে কেন ভিজ।
ঘরের পাড়ে মানের[৩] পাতা কাইট্যা মাথায় ধর॥১২
ভিজিল সোণার অঙ্গ রাত্রি নিশাকালে।
অভাগী নিকটে থাকলে মুছাইতাম কেশে[৪]১৪
সংসার ঘুমাইয়া আছে কেবল বাজে বাঁশী[৫]
হইয়া ঘরের বাহির কোন পথে আসি॥১৬
কাট্যা গেছে কালা মেঘ চান্দের উদয়।
এই পথে যাইতে গেলে কুল মানের ভয়[৬]১৮


  1. Cf. “ঘর কৈনু বাহির, বাহির কৈনু ঘর।
    পর কৈনু আপন, আপন কৈনু পর।”— চণ্ডীদাস।
  2. পিতামাতার ঘুম এখনও কাঁচা আছে। তাঁহাদের একটু গাঢ় নিদ্রা হউক। ‘না’ শব্দটি এখানে অর্থ শূন্য।
  3. মানের=মানকচুর।
  4. কেশে চরণ মুছাইবার কথাটা যেন কতকটা মামুলী হইয়া গিয়াছে, কিন্তু অঙ্গ মোছাইবার কথায় কত আদর, কত প্রাণের স্নেহ প্রদর্শিত হইয়াছে।
  5. সমস্ত সংসার নিস্তব্ধ, একমাত্র বাঁশীর সুরটি কানে আসিতেছে। সাংসারিক কলরব শাস্ত হইলে সমস্ত কামনা-বাসনার অতীত সাধকের চিত্রে যেমন একমাত্র ভগবানের ডাক শোনা যায়, এই ছত্রটিতে সেই ভাবের একটি ইঙ্গিত আছে।
  6. তুলনা”=কহিও কহিও বঁধুরে সই কহিও বঁধুরে।
    গমন বিরোধী হ’ল পাপ শশধরে ৷—চণ্ডীদাস।