পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ভূমিকা
১৯

নারীজনোচিত কমনীয় চরিত্র-মাধুর্য্য এবং রহস্যপ্রিয়তা প্রকাশ পাইয়াছে। যে ব্যক্তি শান্তিকে প্রলুব্ধ করিতে আসিয়াছিল, শান্তি তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াও একটা হাস্যোজ্জ্বল কৌতুকপ্রিয়তা দ্বারা তাহার বিফলতার কষ্ট ততটা বুঝিতে দেয় নাই। অন্যান্য সাধ্বী রমণীরা বঙ্গসাহিত্যে কখনই প্রলোভনকারীদের সঙ্গে রঙ্গরসের অবতারণা করেন নাই। এই পরিহাস অনাবিল ও পবিত্র; ইহা নির্ম্মল ঝরণার জলের মত হৃদয়ের অতিমাত্র প্রফুল্লতার পরিচয় দিতেছে; অথচ তদ্দ্বারা চরিত্র-মাহাত্ম্য অনুমাত্রও ক্ষুণ্ন হয় নাই। এই কৌতুক করিতে করিতে যখন ছলনাকারীকে শান্তি স্বামী বলিয়া চিনিতে পারিল, তখন তাঁহার পরিহাস-রসিকতা প্রকৃতই সার্থক হইল। নতুবা স্বামীর সঙ্গে অতিরূঢ় আচরণ করিলে দাম্পত্যের মর্য্যাদা শেষপর্য্যন্ত রক্ষা হইত না; ইহাতে কবির শিল্প-নৈপুণ্য অতি উৎকৃষ্টভাবে প্রদর্শিত হইয়াছে। ছলনাকারীকে যখন শান্তি স্বামী বলিয়া চিনিতে পারিল; তাঁহার তখনকার বধূজনোচিত সলজ্জ মধুরভাব এবং প্রসাধন-তৎপরতার চিত্র বাস্তবিকই বড় সুন্দর হইয়াছে।

 পালাটি ‘বারমাসী’ জাতীয়। ষড়ঋতু বাঙ্গালা দেশের প্রকৃতির উপর যে বিচিত্র পরিবর্ত্তন আনয়ন করে, সেই বিচিত্র দৃশ্যাবলী রহস্য ও স্নিগ্ধ শ্লেষের দ্বারা মধুর হইয়া এই পালাটির মধ্যে আলোক-আঁধারের সৃষ্টি করিয়াছে।