পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাঞ্চনমালা
১০৫

যোড় মন্দিরের ঘরে কুমার শুইয়া নিদ্রা যায়।
পালঙ্কেতে কুঞ্জমালা ধীরে ধীরে যায়॥১২
আর দিন হাসিখুসী মনের মিলান।
আভেতে ঘিরিল আজ পূন্নিমারি চান্॥১৪
দেখি বা না দেখি তারে মুখে মিলায় হাসি।
কালি যে ফুটিয়া কলি আইজ হইল বাসি॥১৬
সুখের রজনী ছিল গেল পোহাইয়া।
উপায় না পায় কন্যা ভাবিয়া চিন্তিয়া[১]১৮

(১৬)

এই দিকে হইল কিবা শুন দিয়া মন।
দরিদ্র পাইল যেমন হারাইছিল ধন॥
সাপেতে পাইল যেন তার হারা মণি।
রাজপুত্ত্রে পাইয়া কন্যা হইল পাগলিনী॥
দুইজনেতে মনের মিল রয় ভরাভরি।
এই মতে রয় যেন কইতরা কইতরী॥
শুক আর শারী যেন কাননেতে বসি।
কুকিল কুকিলা যেমন বাজায় প্রেমের বাঁশী॥


  1. রাজকন্যার মনের ভাব এই সকল বর্ণনায় খুব নৈপুণ্যেরসহিত চিত্রিত হইয়াছে। কাঞ্চনমালার আগমনের পর হইতে কুমারের যে ভাবান্তর হইতে লাগিল, কুঞ্জমালা ব্যথিত চিত্তে তাহা লক্ষ্য করিতে লাগিল। মনে পড়িতে লাগিল—যে দিন তাঁহার সঙ্গে কুমারের বিবাহ হইয়াছিল এখন আর সে দিন নাই; আগে তো শয্যার পার্শ্বে গেলে কত হাসি কত আনন্দের সঙ্গে কুমার তাঁহাকে আদর করিতেন, আজ যেন পুর্ণিমার চন্দ্রকে অভ্রে ঘিরিয়াছে, সে রূপ আনন্দ তো আর নাই। জোর করিয়া তিনি যে হাসি অধরে আনিতে চেষ্টা করেন, তাহা দেখিতে না দেখিতে মিলাইয়া যায়। এই সে দিন মাত্র যে সুখের কলিকা ফুটিয়া উঠিয়াছে, আজই তাহা ঝরা ফুল হইয়া গেল।