পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৬। কমলারাণী। (২০৮-২১০ পৃঃ)।

 কমলারাণীর গান সম্পূর্ণ সংগ্রহ হয় নাই। কমলাদেবীর সহিত রাজা জানকীনাথের বিবাহের বিবরণ সম্বলিত প্রথম ও দ্বিতীয় সর্গ পাওয়া যায় নাই। চন্দ্রকুমার ১৯২৫ খৃষ্টাব্দের ৩০শে আগষ্ট তারিখে আমাকে পুর্ব্বোক্ত দুই সর্গের সারাংশ লিখিয়া পাঠান। এই পালাটি এক সময়ে মৈমনসিংহ অঞ্চলে খুব প্রচলিত ছিল; সুতরাং পালাটির অপ্রাপ্ত অংশ উদ্ধার করিবার আশা আমি এখনও ছাড়ি নাই। পালা গানটি ৩৪২ ছত্রে সমাপ্ত; আমি ইহাকে দশটি সর্গে বিভক্ত করিয়াছি।

 পালাগানটিতে একটি বাস্তব কাহিনীকে কল্পনার ছাঁচে ফেলিয়া রচনা করা হইরাছে। আখ্যায়িকায় বর্ণিত সুষং দুর্গাপুরের জমিদার জানকীনাথ মল্লিক, তদীয় পত্নী কমলাদেবী এবং পুত্ত্র রাজা রঘুনাথ সিং ইঁহারা ঐতিহাসিক ব্যক্তি। মৈমনসিংহের অন্তর্গত রামগোপালপুরের বারেন্দ্র জমিদার শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী মহাশয় তাঁহার ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দের ৩রা এপ্রেল তারিখের পত্রে চন্দ্রকুমারকে ইঁহাদের সম্বন্ধে নিম্নলিখিত বিবরণ প্রদান করিয়াছেন। “কমলাদেবী জাহাঙ্গীরের সমসাময়িক। তাঁহার পুত্ত্র রঘুনাথ সিং উক্ত সম্রাটের নিকট হইতে “রাজা” উপাধি লাভ করেন। তিনি সুষং দুর্গাপুরের প্রসিদ্ধ জমিদার জানকীনাথ মল্লিকের পুত্ত্র। স্বামি-দৃষ্ট স্বপ্নানুসারে রাণী কমলদেবী দীঘিটিকে জলপূর্ণ করিবার জন্য প্রাণত্যাগ করেন, এইরূপ প্রবাদ এতদঞ্চলে প্রচলিত আছে। কমলাসাগর নামধেয় দীঘির কিয়দংশ এখনও বর্ত্তমান; অবশিষ্টাংশ সোমেশ্বরী নদী গ্রাস করিয়াছে। জানকীনাথ আকবরের সমসাময়িক। রাজা রঘুনাথসম্বন্ধীয় উল্লেখযোগ্য যাবতীয় ঐতিহাসিক তথ্য মদ্রচিত মৈমনসিংহের বারেন্দ্র জমিদারদিগের ইতিহাসের দ্বিতীয় খণ্ডে পাওয়া যাইবে।” খ্যাতনামা লেথ্‌ব্রিজ সাহেবও তাঁহার ইংরেজীতে লিখিত “The Golden Book of India” পুস্তকে এই রাজা রঘুনাথ সম্বন্ধে লিখিয়াছেন যে তিনি রাজা উপাধি-লাভ এবং গারো প্রজা দমনার্থ দিল্লীর সাহায্য লাভ করিয়া কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ প্রতিবৎসর গারোপাহাড়ে উৎপন্ন