পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শান্তি
১২৭

“খেতের তরমুজ নয়রে সাধু আমি কাটিয়া বিলাব।
কোলের সন্তান নয়রে আমি এ স্তন পিলাব॥”[১]

“য়্যাও মাস ভারাইল্যা হারে শান্তি না পুরিল আশ।
লবলং ছুরৎ ধইর‍্যা আইল জ্যৈষ্ঠ মাস॥

এহিত জ্যৈষ্ঠ না মাসে শান্তি গাছে পাকে আম।
ভারায় ভারায়[২] আইন্যা দিব শান্তি আম কাঠাল জাম॥”

“আনছাও আনছাও[৩] আম হারে কাঁঠাল আমি উয়া নাহি চাই।
তোমার ঘরে আছেন জ্যেষ্ঠ বহিন তুমি দাওগা তানার ঠাঁই॥”

“কি বোল বলিলা হারে শান্তি আমার অন্ত্রে দিলা কালি।
ছোট বইন বইল্যা তুমি আমায় দিল। গালি।
“য়্যাও মাস ভারাইল্যারে শান্তি না পুরিল আশ।
লবলং ছুরৎ ধইরা আইল আষাঢ় মাস॥”

“এহি আষাঢ় হারে মাসে শান্তি গাঙে নুড়্যা[৪] ভাটি।
তোমার সাধু গেছে মারা কাঞ্চনপুরের ভাটি॥”

“আমার যদি সাধু হারে মরত কাঞ্চনপুরের ভাটি।
আমার আওলাইত[৫] মাথার ক্যাশরে[৬] ছিড়ত গলার মোতী॥


  1. পিলাব = পান করাইব। এই সকল ছত্র পড়িয়া ময়নামতীর গানের “ধর্ম্ম ঘটী যৌবন আমি কেমনে রাখিব” প্রভৃতি ছত্র মনে পড়িবে।
  2. ভারায় ভারার = ভারে ভারে।
  3. আনছাত আনছাও = আনিয়া থাক। (এনেছ এনেছ)।
  4. নুড়্যা = জোরের; খরতর। ‘নোড়’ শব্দ পূর্ব্ববঙ্গে দৌড়ান অর্থে ব্যবহৃত হয়; পুরাতন বাঙ্গালায় ‘বড়, রহড়’ প্রভৃতি শব্দও পাওয়া যায়। সুতরাং ‘নুড়্যা ভাটি’ শব্দে খুব জোরে ভাটিকে বুঝাইতেছে।
  5. আওলাইত= আলুলায়িত হইত; খসিয়া যাইত।
  6. ক্যাশ = কেশ।