পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
২৯

প্রধান বৈশিষ্ট্য। আখ্যায়িকার কোন কোন অংশ সুদীর্ঘ হইলেও আগাগোড়া এমন একটা কৌতুকের ধারা প্রবাহিত হইয়াছে যে ভাষার দুরূহতা সত্ত্বেও পাঠকের মনে শ্রান্তি বা বিরক্তির সঞ্চার হয় না। ব্যঙ্গরসের অবতারণায় কবির হাত বেশ পটু; তিনকড়ি কবিরাজ প্রদত্ত লাল, নীল ও সাদা তিনটি বড়ি ও তাহা সেবনের অমোঘফলস্বরূপ বাসুর মাতার মৃত্যু ইত্যাদি বর্ণনায় তৎকালের চিকিৎসক-সম্প্রদায়ের উপর কটাক্ষপাত কর হইয়াছে। মুসলমানী আমলের বঙ্গসাহিত্যে অনেক সময়ই চিকিৎসকদিগের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি বর্ষিত হইতে দেখা যায়। ষোড়শশতাব্দীর শেষভাগে রচিত চৈতন্যভাগবতে কথিত আছে চৈতন্যদেব মুরারি গুপ্তের গুণগ্রাহী হইয়াও তাঁহার ব্যবসায় লইয়া উপহাস করিতেন। কবিকঙ্কণ মুকুন্দরামও বৈদ্যদিগের যে চিত্র দিয়াছেন তাহাও ক্রুর ব্যঙ্গময়। কবিকঙ্কণের সমকালবর্ত্তী প্রসিদ্ধ ইংরেজ গ্রন্থকার বেকন চিকিৎসকদিগের সম্বন্ধে লিখিয়াছেন যে, মাঝিরা যেরূপ শিষ্ দিয়া মনে করে সেই শিষের জোরে হাওয়া আসিবে, ডাক্তারেরা সেইরূপ ঔষধ দিয়া পুরাতন ব্যারাম ভাল করিতে পারেন বলিয়া বিশ্বাস করেন। প্রাচীন যুগে লোকে সাধারণতঃ স্বাস্থ্যবান থাকিত এবং চিকিৎসকগণের ঔষধ অপেক্ষা স্বাস্থ্যপালনের নিয়মাবলীর প্রতি অধিকতর আস্থা প্রদর্শন করিত, ইহাই সেই সময়ের চিকিৎসাব্যবসায়ের প্রতি উপেক্ষাশীল হওয়ার কারণ বলিয়া মনে হয়। কবিরাজেরা তখন মিঠা বিষ প্রয়োগ করিয়া আপাততঃ রোগীকে রক্ষা করিয়া দর্শণী ও পারিতোষিকাদি লইয়া প্রস্থান করিতেন; পরে রোগীর মৃত্যু হইলেও চিকিৎসকের অপযশ হইত না; যেহেতু বিষ-প্রয়োগের ফলে জ্বর ছাড়িয়া যাইত। মৃতব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন অদৃষ্টের দোহাই দিয়া প্রবোধ মানিতেন।

 কবি জামাইৎউল্লা কখন কখনও হিন্দুদিগের প্রচলিত বিশ্বাস ও প্রথাসমূহের প্রতি বিদ্রূপ করিয়াছেন; ৬ষ্ঠ খণ্ডে ২৪-৩০ ছত্রে কবি কন্যা-জামাতার বিদায়কালীন একটি স্ত্রী-আচারের প্রতি কটাক্ষ করিয়াছেন।

 পঞ্চম খণ্ডে ২৬-১০৮ ছত্রে যে পূর্ব্বরাগের বর্ণনা আছে, তাহাতে কবি কোথায়ও অসংযত ভাব প্রকাশ অথবা নারীচরিত্রের স্বাভাবিক মাধুর্য্য ও বিশুদ্ধতার হানি করেন নাই; অথচ বর্ণনাটি কবিত্বপূর্ণ ও মনোরম