পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

হইয়াছে। পালার বর্ণিত বাসু, কানু প্রভৃতি চরিত্রগুলি দস্যুতা ও যথেচ্ছাচার দোষে দুষ্ট হইলেও পুরুষোচিত সাহস ও শৌর্য্যবীর্য্যে উজ্জ্বল হইয়া উঠিয়াছে। মাণিকতারার চিত্র শেষের দিকে যে ভাবে কবি আঁকিয়াছেন, তাহাতে মনে হয় বুদ্ধিপ্রখরতা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে এই নারী কাব্যের শেষাংশে বিশেষরূপ প্রতিভাময়ী হইয়া উঠিয়াছিলেন। তাঁহার ন্যায়পরতা ও ধর্ম্মজ্ঞান সম্বন্ধে সংশয় থাকিলেও তাঁহার অদ্ভুত প্রতিভায় কাহারও অবিশ্বাস হইবে না। পালাটি অনেক স্থলে মাণিকতারার নামে প্রচলিত থাকায় মনে হয়, মাণিকতারাই এই পালার মুখ্য চরিত্র। শেষের দিকেই এই চিত্র বিশেষরূপ ফুটিয়াছিল বলিয়া বোধ হয়, কিন্তু আমরা তাহা পাই নাই।

 ডাকাতি এবং অত্যাচার উৎপীড়নের বিবরণে পালা পাঠ করিবার সময় সাময়িক বিতৃষ্ণা জন্মিলেও বাসুর মাতার চরিত্রে সেই দোষ কতকটা অপনোদিত হইয়াছে। বাসু হৃতসর্ব্বস্বা বিধবার ‘সবে ধন নীলমণি’ হইলেও তিনি যখন শুনিলেন যে পুত্ত্র বাসু ব্রহ্মহত্যা করিয়া ধনরত্ন আহরণ করিয়াছে, তখন তিনি তাঁহার সেই একমাত্র পুত্ত্রের মৃত্যুকামনা করিয়াছিলেন। পুত্ত্রের এই দুষ্কৃতির জন্য নিদারুণ মনোব্যথা পাইয়াই তিনি প্রাণ-ত্যাগ করেন।

 পালাটি ৮৩২ ছত্রে সমাপ্ত; আমি ইহাকে দশটি সর্গে বিভক্ত করিয়াছি।