পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মদনকুমার ও মধুমালা। ২৭৫—৩১০ পৃঃ

 এক সময় গঙ্গার উপকূল হইতে সুরু করিয়া বিশাল পদ্মাতীর এবং ধলেশ্বরী, ব্রহ্মপুত্র ও শীতলাক্ষা-ধবলিত সুবিস্তৃত ভূখণ্ডে মধুমালার গল্প প্রচলিত ছিল। ইন্দ্রের দুই অপ্সরা মধুমালা ও মদনকুমারকে একটি রাত্রের জন্য মিলিত করিয়া এক অপূর্ব্ব ভ্রান্তিবিলাসের সৃষ্টি করিয়াছিল। তাহাই নহে; মদনকুমারের আংটিটি তাহারা দিয়াছিল মধুমালার আঙ্গুলে, আর মধুমালার আংটি পরাইয়াছিল মদনকুমারের আঙ্গুলে। মদনকুমারের খাটে মধুমালাকে আর মধুমালার পালঙ্কে মদনকুমারকে তাহারা শোয়াইয়া দিয়াছিল। বাস্তব জগতে মিলনের এই অপূর্ব্ব প্রমাণ রাখিয়া তাহারা এই দুই নায়কনায়িকার জন্য প্রেমের যে বাগুরা রচনা করিয়াছিল, তাহাতে দুইটি প্রাণীই ধরা পড়িয়া গিয়াছিল। আমরা ছোটকাল হইতে এই রূপকথাটি শুনিয়া আসিয়াছি; গল্পকারিণীর মুখে “আমি স্বপ্নে দেখিলাম মধুমালার মূখ রে”—অতি শৈশবে শুনিয়াছি, সেই গীতের রেশ এখনও কাণে বাজিতেছে। মদনকুমার পাগল হইয়া গেলেন। তিনি নিদাঘনিশীথের বসন্ত বায়ু ভোগ করিতে করিতে একটি মধুর স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন, একথা ভাবিবার সুবিধা কোথায়? “স্বপন যদি মিথ্যা হ’ত, তার আংটি কেন আমায় দিত”? “স্বপন যদি মিথ্যা হত, খাট-পালঙ্ক কেন বদল হত”? অপ্সরাদের কয়েক মুহূর্ত্তের রঙ্গরসের ফলে “বুঝাইলে না বুঝে কুমার হইল পাগলা। খাওনে শোওনে কান্দে কোথায় মধুমালা”। মধুমালারও সেই অবস্থা। এই রূপকথাটি বঙ্গদেশের ভিন্ন ভিন্ন জেলায় এত বিভিন্নরূপে প্রচলিত আছে যে সেগুলির সমস্ত ছাপাইতে গেলে একটা প্রকাণ্ড পুস্তক হইয়া পড়িবে। বটতলায় মধুমালা ছাপা হইয়াছে, তাহা ছাড়া দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার মহাশয় আর একটা সংস্করণ ছাপাইয়াছেন। তৃতীয়টি এইখানে ছাপা হইল। এই ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণের মিল যেরূপ আছে, গরমিলও তেমনই আছে। তবে এ কথাটি