পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

“সোয়ামী হইয়া চিন্‌তে নারে যে আপনার নারী। তাহার কাছে যে আমি থাকিতে না পারি। (৩০৯, পৃঃ)।

 চন্দ্রকুমার বাবু এই পালাটি মৈমনসিংহ হইতে সংগ্রহ করিয়াছেন। কিন্তু এখনও বঙ্গের প্রতি জেলাতেই বোধ হয় ইহা ভিন্ন ভিন্ন আকারে প্রচলিত আছে। “মধুমালা” শেষে বঙ্গীয় জনসাধারণের সংস্কারে পরীরূপে পরিণত হইয়া গিয়াছিল। “মধুমাতী-সাধন” নামক একরূপ নায়িকা-সাধনের উল্লেখ কোন কোন পুস্তকে দৃষ্ট হয়। বৃন্দাবন দাস-কৃত চৈতন্যভাগবতে বিদ্রূপস্থলে এই সাধনের উল্লেখ আছে।

 গল্পের বর্ত্তমান সংস্করণটি চন্দ্রকুমার বাবু কৃষকদিগের মুখে যেমন শুনিয়াছেন, ঠিক সেই ভাবেই লিখিয়া লইতে চেষ্টা করিয়াছেন। একাজ বড় দুরূহ। শিক্ষিত লোকের লেখনী মাঝে মাঝে, চাষার কথার প্রতি ঘৃণার দরুণই হউক অথবা অভ্যাসগত অনবধনতা বশতই হউক, প্রাচীন রচনার উপর অনেকটা সংশোধন কার্য্য করিয়া থাকে। কয়েক স্থানে বর্ত্তমান সংগ্রাহক এই দোষ এড়াইতে পারেন নাই। তথাপি ইনি চাষার ভাষা যতটা খাটি রাখিয়াছেন, ততটা আর কোনও সংগ্রাহক রাখিতে পারিয়াছেন বলিয়া আমার জানা নাই।

 পূর্ব্ব মৈমনসিংহের ভাষা হইতে কয়েকটি সূত্র উদ্ধার করা যায়—(১) ‘ট’স্থান অনেকস্থলে তদ্দেশবাসীরা ‘ড’ ব্যবহার করেন, যথা ‘বেটা’ স্থলে ‘বেডা’ (২৭৮ পৃঃ); জটা=জডা (২৭৯ পৃঃ); মাটি=মাডি (২৮৩ পৃঃ) সেইটা=সেইডা (২৮৫ পৃঃ); পিটাইয়া=পিডাইয়া (২৮৯ পৃঃ); কথাটা=কতাডা (২৮৯ পৃঃ); কান্দাকাটি=কান্দাকাডি (২৯০ পৃঃ); মেয়েটারে=মাইয়াডারে (২৯০ পৃঃ); ছিটাইয়া=ছিডাইয়া (২৯৫ পৃঃ); পক্ষীটা=পক্ষীডা (২৯৫ পৃঃ); একটা=একডা (২৯8 পৃঃ)। কখন কখনও ‘ঠ’স্থানেও ‘ড’ ব্যৱহৃত হয়:—যথা কাঠুরিয়া=কাডুরিয়া (২৮৯ পৃঃ); কোঠা=কোডা (২৮৩ পৃঃ); পাঁঠা=পাঁডা (২৯২ পৃঃ); এইটা=এইডা (৩০০ পৃঃ)—এরূপ বহু উদাহরণ আছে; ‘শ’ ও ‘স’ স্থানে ‘হ’ পূর্ব্বববঙ্গের নিম্নশ্রেণীর মধ্যে প্রায় সর্ব্বত্রই ব্যবহার হইয়া থাকে; পূর্ব্ব-মৈমনসিংহে এই ব্যবহার বহুল পরিমাণে দৃষ্ট হয়:—যথা সেই=হেই (২৭৯, ২৮৪, ২৮৫ পৃঃ), সকল=