পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাণিকতারা বা ডাকাতের পালা
২৫১

“হস্ত পুইড়া খাওয়ে বাসু খাওরে কাইঠা চিড়া[১]
দ্যাহের মাংস শুক্‌না হৈল কৈলজা জিরজিরা॥১৬
মাইন্দা গিরাম আছে বাপু কোরোশ তিনি ঘাটা[২]
সেহি গেরামের সাধুশীল ভাঁল মাইন্‌ষের বেটা॥
খোঁজ পাইয়াছি তাহার আছে ঘরে বান্দা পরী।
‘মাণিকতারা’ নাম কন্যার পরম সোন্দরী॥২০
সেই খানেতে যাইয়া তুমি বিয়ার প্রেস্তাব কর।
নিরবন্দে জোটাইলে তুমি খুসী হৈবা বড়॥
কানুর মাও চইলা গেলে বাসু ভাবে মোনে।
ই যুক্তিডা মোন্দ নয় যামু যে বিহানে॥২৪
রাইত পোষাইলে বাসু নাই ধুতি চাদ্দর নইয়া।
চৈত মাইসা রৈদ পেইলা যায় মাথাত চাদ্দর দিয়া॥
বাসু গেল মাইন্দা গায় পহর তিনি বেলা।
মাথার ঘম্ম পায় পইরাছে রৈদের বিষম জ্বালা॥২৮
ছামনে পৈল টলটলা[৩] খাল কলকলাইয়া চলে।
ওপারকার মাইয়া মানুষ কলসী ভরে জলে॥
সাইরে সাইরে ওপার বাড়ী ইপার বাড়ী নাই।
বাসু যাইয়া শিমইল তলায় বৈশা পৈল তাই॥৩২
হাপুস হুপুস নিয়াস[৪] পরে জলের দিরে[৫] চায়।
ইচ্ছা হৈল মোনের মোত আজইল ভইরা[৬] খায়॥


  1. কাইঠা চিড়া=কাঠের মত শক্ত শুক্‌না চিঁড়া।
  2. কোরোশ তিনি ঘাটা=তিন ক্রোশের পথ।
  3. টলটলা=স্বচ্ছসলিল; এখানে ‘টলটলা’ ও ‘কলকলাইয়া চলে’ এই দুইটি পদ ব্যবহৃত হইয়া যথাক্রমে জলের নির্ম্মলত্ব এবং প্রবাহের মৃদুমধুর তান সূচিত করিতেছে। ভারতচন্দ্র তুলনীয়, “ছলচ্ছল্ টলট্টল্ কলক্কল্ তরঙ্গা।”
  4. নিয়াস=নিশ্বাস।
  5. দিরে=দিকে।
  6. আজইল=অঞ্জলি।