এই কথা বলি ফকির হৈয়া গেল চুপ।
হেষ্ট-মুখী রৈল ডাকাইত হইল বেকুব॥
কৃত্তিবাস পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বাঙ্গালা রামায়ণ রচনা করেন। কৃত্তিবাস মুসলমানী আখ্যায়িকা হইতে দস্যু রত্নাকরের কাহিনীর উপাদান গ্রহণ করিয়াছিলেন, অথবা হিন্দু ও মুসলমান উভয় কবিই প্রাচীন কালের কোনও বিস্মৃত নামা সাধুর জীবন-বৃত্তান্তের অনুকরণ করিয়াছিলেন—সে কথা বলা কঠিন।
নিজামুদ্দিন আউলিয়া সম্বন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় শ্রীযুক্ত মৌলবী সহিদুল্লাহ এম. এ., বি. এল. মহাশয় লিখিয়াছেন যে নিজামুদ্দীন আউলিয়া ত্রয়োদশ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি দিল্লীর অধিবাসী। কথিত আছে, সেখ ফরিদের সঙ্গে সাক্ষাতের পূর্ব্বে নিজাম বায়ান্নটি নরহত্যা করেন এবং জব্বরকে মারিবার সময় তিনি বলিয়াছিলেন, “যাহা বায়ান্ন, তাহা তেপ্পান্ন।” তদবধি নাকি নিজাম আউলিয়ার এই উক্তি প্রবাদে পরিণত হইয়াছে। কিন্তু এই পালাগানে দেখা যায় যে ফরিদের সঙ্গে সাক্ষাতের পূর্ব্বে নিজাম প্রত্যহ নিরানব্বইটী করিয়া লোকের প্রাণ সংহার করিতেন।
বাঙ্গালা ১৩৩২ সালের ১৫ই ফাল্গুন তারিখের আনন্দ বাজার পত্রিকার বিশেষ-সংখ্যায় অধ্যাপক শ্রীযুক্ত যদুনাথ সরকার সি. আই. ই, মহাশয় এই নিজামুদ্দান সম্বন্ধে ফার্সী সাহিত্য হইতে অনেক তথ্যের সন্ধান দিয়াছেন। ‘তুজুকী জাহাঙ্গীরী’তে নিজামুদ্দীনের উদার মত সম্বন্ধে একটি গল্প আছে। একদিন নিজামুদ্দীন যমুনা তীরে বহু হিন্দুকে “হর হর” শব্দ উচ্চারণ করিতে শুনিয়া বলিয়াছিলেন, “হর্ কমরস্থ রহে দিনি ওকিলি গহে” (অর্থাৎ প্রত্যেক জাতিরই স্বধর্ম্মে মুক্তির সহজ উপায় প্রদর্শিত হইয়াছে)। ইহার উত্তরে নিজাম-শিষ্য আমির খসরু নিম্নলিখিত ফার্সী শ্লোক রচনা করিয়া বলিয়াছিলেন, “মন্ কিবলা এ রস্থ কার্দাম্ বর্ শিম্ল আ কব্জ্ কুলহে” (অর্থাৎ আমার গুরুর এই বক্র শিরোবন্ধটি আমার মুক্তির উপায়)। প্রবাদ আছে, সুলতান মহম্মদ তোগলকের নিষ্ঠুর অত্যাচারে ক্রুদ্ধ ও বিচলিত হইয়া নিজাম শাপ দিয়াছিলেন, তাহাতে তোগলকাবাদ মরুভূমিতে পরিণত হইয়াছিল।