পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৪৩

মুন্‌সী রাজচন্দ্র ঘোষ ও পণ্ডিত কালীকুমার চক্রবর্ত্তী মহাশয়দ্বয় কালিদাস গজদানীকে ইশাখাঁর পিতা বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়া এই গজদানী হইতেই দেওয়ান বংশের ইতিহাসের সূচনা নির্দ্দেশ করিয়াছেন। উক্ত পণ্ডিতদ্বয়ের জঙ্গলবাড়ীর দেওয়ান পরিবারের রক্ষিত রাজ্যশাসন সংক্রান্ত পুরাতন কাগজপত্র দেখিবার সুযোগ হইয়াছিল; সেই সকল উপকরণের সহিত ইউরোপীয় এবং দেশীয় ঐতিহাসিকদিগের গবেষণামূলক বিবরণ তুলনা করিয়া গ্রন্থকারদ্বয় দেওয়ান পরিবারের একটি ধারাবাহিক ইতিহাস সঙ্কলন করিয়াছেন।

 ইশাখাঁ এবং তাঁহার বংশধরদিগের কীর্ত্তিকাহিনী অবলম্বনে বিরচিত মোট চারিটি পালাগান আমরা পাইয়াছি। কোনও অজ্ঞাতনামা কবি কর্ত্তৃক সপ্তদশ শতাব্দীতে রচিত একটি পালা সর্ব্বপ্রথমে সংগৃহীত হয়। কিঞ্চিদধিক একশত বৎসর পূর্ব্বে কিশোরগঞ্জ মহকুমার গলাচিপা গ্রামের মুনসী আবদুল করিম রচিত পালাটি আমাদের দ্বিতীয় সংগ্রহ। এই পালাটি অনেকটা কল্পনামূলক বলিয়া মনে হয়। তৃতীয় পালাটি মুখ্যতঃ ইশাখাঁর পৌত্র মনুয়ার খাঁর জীবনী অবলম্বনে রচিত; ইহাতে প্রসঙ্গক্রমে ইশাখাঁর কথা আছে। চতুর্থটি এক অজ্ঞাতনামা মুসলমান লেখক-বিরচিত; পালার নাম “দেওয়ান ফিরোজ খাঁর গান।”

 দুঃখের বিষয় এই যে পূর্ব্বোক্ত পালাগান সমূহে ইশাখাঁর যে সমস্ত বিবরণ পাই, তাহাদের বর্ণনায় সর্ব্বত্র ঐক্য নাই। এই সমস্ত বিবরণ এবং মুসলমান ও ইউরোপীয় গ্রন্থকার প্রদত্ত ইতিহাসগুলি পর্য্যালোচনা করিয়া আমাদিগকে ইশাখাঁর ইতিহাস উদ্ধার করিতে হইয়াছে। ১৫৮৬ খ্রীষ্টাব্দে র‍্যালফ্ ফিচ্ সোণার গাঁ পরিদর্শন করিয়া লিখিয়া যান, “এই তাঞ্চলের অধিপতি ইশাখাঁ বঙ্গদেশের অপরাপর ভূম্যধিকারীদের অধিনায়ক এবং খ্রীষ্টানদিগের পরমবান্ধব।” আইন-ই-আকবরী হইতে জানা যায় যে ১৫৮৫ খ্রীষ্টাব্দে ইশাখাঁ সাহবাজ খাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত বিপুল সম্রাট্ বাহিনীর গতিরোধ করেন। ইহাতে মানসিংহের সহিত ইশাখাঁর তুমুল যুদ্ধ, এবং ষোড়শ শতাব্দীতে পূর্ব্ববঙ্গে ইশাখাঁর দোর্দ্দন্ত প্রভাবের বিবরণ পাওয়া যায়। আইন-ই-আকবরীতে ইশাখাঁ কোন কোন স্থানে “বঙ্গদেশের বিভব-শালী ভূস্বামী” বলিয়া উল্লিখিত।