পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মদন কুমার ও মধুমালা
২৯৩

এমন সুন্দর মাইয়া লোক[১] আর কখখনও দেখ্‌ছে না[২]। হে মনে করল যে কোনো রাজরার মাইয়া[৩] জোর কইরা ধইরা লইয়া আইছে[৪]। এরে যদি কোনো রকমে রাজার হাত থাইক্যা উদ্ধার কর্‌তাম্ পারি[৫], তাহইলে খুব পুরস্কার পাইব। তখন হে মধুমালার কাচে বইসা তার যত দুঃখের কথা হুন্‌ল[৬]। হুইন্যাই[৭] হে রাণীর কাছে গেল। রাণীরে এই কথা কইয়া বুঝাইল যে রাজা যে নতুন বিয়া কর্‌তাছে[৮], সে সেইরকম[৯] পরীর মাফিক সুন্দর—সে যদি রাণী হয় তাহইলে এরাজ্যে আর তোমার জাগা নাই। তখন মনে মনে রাণী ভাব্‌ল যে কথাত ঠিকই। রাণী তখন নাপতানীরে কইল যে—এই বিয়া যদি কোনো রকমে না কোনো রকমে বা এই মাইয়াডারে[১০] যদি রাজ্যের মধ্যে থাক্যা কোনো রকমে সরাইতে পারছ[১১], তা অইলে আমার গায়ের যত অলঙ্কার সব তোরে দিয়াম[১২]; আরো লক্ষ টাকা দিয়াম।

 অলঙ্কারের কথা হুইন্যা নাপ্‌তানী নাপিতের কাছে গিয়া সব কথা ভাইঙ্গা[১৩] খোলাসা কইল। তখন সাতছালা বুদ্ধির নাপিত নাপতানীরে একটা পরামর্শ দিল। এই কথাটা নাপতানী গিয়া আবার রাণীর ঠাঁই কইল; মধুমালার কাছেও কইল! তখন ঠিক হইল যে বিয়ার রাইতা চেলী কাপড় পইড়া রাণী মধুমালা ঘরে গিয়া থাকবে। আর মধুমালা রাণীর কাপড় চোপড় অলঙ্কার পইরা রাণীর বেশ ধরবে। তারপর অইলগা[১৪]— বিয়ার দিন মধুমালা রাণীর কাপড় চোপড় পইরা[১৫] পলাইল। মধুমালা যাওনের সময় তার গায়ের যে অলঙ্কার পত্র কাপড় চোপর আছিল—সব নাপতানীরে দিয়া এক পুরুষের বেশ ধইরা যাইতে লাগল তারপর যাইতে যাইতে, যাইতে যাইতে ছয় মাস পরে উজানী নগরে মদনকুমারের বাড়ীৎগিয়া অতিথ অইল[১৬]। মদনকুমারের মা একমাত্র পুত্রশোকে কান্‌তে কান্‌তে এক্কেবারে অন্ধ অইয়া গেছে। মধুমালা কইল যে আমি মদনকুমারের বন্ধু


  1. মাইয়া লোক=মেয়ে লোক।
  2. দেখছেনা=দেখেনাই।
  3. মাইয়া=মেয়ে।
  4. জোর কইরা ধইরা লইয়া আইছে=জোর করিরা লইয়া আসিয়াছে।
  5. করতাম্ পারি=করিতে পারি।
  6. হুন্‌ল্=শুন্‌ল।
  7. হুন্যাই=শুনিয়াই।
  8. কর্‌তাছে=করিতেছে।
  9. সেইরকম=তেমন।
  10. মাইয়া ডারে=মেয়েটাকে।
  11. পারছ=পার।
  12. দিয়াম্‌=দিব।
  13. ভাইঙ্গা=ভাঙ্গিয়া।
  14. অইল গা=হলো গে।
  15. পইরা=পরিধান করিয়া।
  16. অতিথ অইল=অতিথি হইল।