পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তদন কুমার ও মধুমালা
২৯৫

কইল যে পরীর মুল্লুকে যাওনের পথ কোন্‌খান দিয়া। তখন বড় বইন কইল যে এই নদী দিয়া যাইতে যাইতে চাইরটা ডাল[১]—এক ডালে দিয়া, দেখ্‌ব[২] যে দুধের মত পানি যায় আর যত রকম ফুল ভাইস্যা যাইতাছে; হেই ডাল দিয়া গেলে পরীর মুল্লুক পাইব। হেই পরীর মুল্লুকে পরীরা মদনকুমাররে তোতাপক্ষী বানাইয়া রাখ্‌ছে তখন মধ্যম বইন আবার জিজ্ঞাসা করল—তারে উদ্ধার করব কি রকমে। তখন সেই বড় বইন কইল— ইন্দ্রের পুরীর মধ্যে যে অমৃতসরোবর আছে, হেইখান থাক্যা[৩] জল আন্যা যদি পক্ষীডার গায় ছিডাইয়া দিত পারে[৪] তা অইলে পক্ষীডা মানুষ অইয়া যাইব। তখন আবার মধ্যম বইন কইল—পরীরা তারে দেখ্‌লে মাইরা ফালতনা[৫]? তখন বড়বইনে কইল এই কথা যে—হেইখানে হে কুনুরকমে লুকাইয়া থাইক্যা পরীরা যে ইন্দ্রপুরীত্[৬] যায় সেই রথ কোনো রকমে লুকাইয়া রাখ্‌ত পারে অ্যার কোনো রকমে যদি পরীরা এক রাইত ইন্দ্রের পুরীতে না যায় তা অইলে ইন্দ্রের শাপে তারাও পক্ষী অইয়া যাইব[৭]। কিন্তু সতী কন্যা ছাড়া কেউ স্বর্গের যাইত পারত না[৮] পরীর মুল্লুকেও না।

 এই কইয়াই দুই বইন উইড়া গেল। মধুমালা কিন্তু শুইয়া শুইয়া হেই কথা গুলাইন্‌ হুন্‌ল[৯]। তখন আবার ভাইট্যাল ডিঙ্গা বাইয়া যাইতে লাগল। যাইতে যাইতে সেখানে নদীর চাইর ডাল, যে ডালে দুধের সোত বইত, হেই ডাল দিয়া যাইতে যাইতে পরীর মুল্লুকে গিয়া দাখিল অইল। গিয়া দেখে কি এইখানে কেবল সোনারূপার ঘর আর কেবল ফুলের বাগান। কত যে ফুল ফুইট্যা রইছে তার সীমা সংখ্যা নাই। মধুমালা রাইত হেইখান গেছিল[১০]। দেখে কি?—সোনারূপার সব ঘর পইড়া রইছে, একটা মানুষও নাই। তখন হে একটা ঘরের মধ্যে গিয়া দেখল, কত রকমের যে ফল পইড়া রইছে তার আর সীমা নাই। আর একটা ঘরের মধ্যে গিয়া দেখ্‌ল


  1. চাইরটা ডাল=চারিটা শাখা।
  2. দেখ্‌ব=দেখিবে।
  3. হেইথান থাক্যা=সেই খান হইতে।
  4. দিতপারে=দিতেপারে।
  5. মাইরা ফাল্‌তনা=মারিয়া ফেলিবেনা?
  6. ইন্দ্রপুরীত=ইন্দ্রপুরীতে।
  7. অইয়া যাইব=হইয়া যাইবে।
  8. যাইত পারতনা=যাইতে পারিতনা।
  9. হেই কথা গুলাইন হুনল=সেই কথাগুলি শুনিল।
  10. রাইত হেইখান গেছিল্=রাত্রে সেখানে গিয়াছিল।