পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মদন কুমার ও মধুমালা
২৯৯

ডাল দিয়া কালাপানি্ বইয়া যাইতাছে[১], আর নদীর দুই পারে গাছের ডালে বইয়া[২] বে-পরিমাণ কাউয়া[৩] কা কা করতাছে। এই দেইখ্যা মদনকুমার হেই দিকেই নৌকা চালাইল। অনেক দূরে গিয়া দেখে যে একটা পুরী দেখা যাইতাছে। হেই পুরীত[৪] সব কালা পাথরের ঘর, গাছের ফুল পাতা সব মিচ্‌মিচা কালা[৫]। একখান ডিঙ্গা থুইয়া মদন কুমার হেই পুরীর মধ্যে গেল। গিয়া দেখল কি— ভূতের মতন কালা চেহারার একটা বুড়ী একট্টা গাছের তলায় বইয়া রইছে। চাইর দিকে তার, মেলা[৬] পাঁঠায় ঘাস খাইতেছে। এই পুরীর বির্ত্তান্ত বুড়ীর কাছে শুননের লইগ্যা মদনকুমার বুড়ীর কাছে গেল। মদনকুমার যেই বুড়ীর কাছে গেছে হেমনই[৭] বুড়ী ফুলের মালা মদনকুমারের গলায় দিল। গলায় দিতেই মদনকুমার একটা পাঁঠা হইয়া গিয়া হেই দলের লগে ঘাস খাইতে লাগল।

 এই রকমে মদনকুমারের ছয়মাস পার অইয়া গেল। একদিন ইন্দ্রপুরের কন্যার কাছে মধুমালা জান্‌ত পার্‌ল যে তার সোয়ামী এইরকমে দেওদানবপুরে বিপদগ্রস্ত অইছে[৮]। হে তখন করল কি?—একটা ডিঙ্গা কইরা মেলা দিল[৯]। যাইতে যাইতে হেই চৌমাথায় গিয়া দাখিল অইল। যেদিক দিয়া নাকি কালাপানি বইয়া যাইতাছিল[১০], হেই দিক দিয়া ডিঙ্গা উজাইতে উজাইতে, হেই দেওদানব[১১] পুরীতে গিয়া উপস্থিত অইল। খুব বাক্কা[১২] একটা পুষ্যের[১৩] বেশ ধইয়া মায়া বুড়ীর কাছে গিয়া উপস্থিত অইল!

 তখন বুড়ী করল কি—তার গলায় একটা ফুলের মালা দিল। এই পর্য্যন্ত বুড়ী যত গুলি রাজকুমারের গলায় ফুলের মালা দিছে[১৪], সবগুলিই পাঁডা[১৫] অইয়া গেছে। কিন্তু, এই যে রাজকুমার সেই মানুষ, হেই মানুষ।


  1. কালা পানি বইয়া যাইতাছে=কাল জল বহিয়া যাইতেছে।
  2. বইয়া=বসিয়া।
  3. কাউয়া=কাক।
  4. হেই পুরীত=সেই পুরীতে।
  5. মিচ্‌মিচ কালা=ঘোর কৃষ্ণবর্ণ।
  6. মেলা=অসংখ্য।
  7. হেমনই=তৎক্ষণাৎ।
  8. অইছে=হইয়াছে।
  9. মেলা দিল=যাত্রা করল।
  10. বইয়া যাইতাছিল=বহিয়া যাইতেছিল।
  11. দেওদানব=দৈত্য দানব।
  12. বাক্কা=সুন্দর।
  13. পুষ্যের=পুরুষের।
  14. দিছে=দিয়াছে।
  15. পাঁডা=পাঠা।