পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মদন কুমার ও মধুমালা
৩০৩

মধ্যে ছুঁওয়াইল। ছুঁওয়াইবা মাত্রই গাছ গুলাইন্‌ মানুষ অইয়া গেল। এর মধ্যে মদনকুমাররেও পাইল। তার পরেদিন থাক্‌তে থাক্‌তেই তারা দেশ বুল্যা[১] রওনা অইল।

(১৩)

 তারপর আর এক বছরের কথা। মদনকুমার ফির‍্যা বার বানিজ্যে রওনা অইল। এই দিকে মধুমালা, বার বছরের আর কয়দিন আছে, একটা গাছের তলে শুইয়া শুইয়া তাই গণতাছে। এমন সময় হেই গাছের উপরে, ইন্দ্র পুরীর দুই কন্যা আইয়া উড়্যা বইলা। মধ্যম বইন্ বড় বইনেরে ফুইদ্ করে—এই কন্যার দুঃখু দূর অইবার আর কত দিন বাকি আছে? বড় বইন্‌ কইল—অনেক দিন বাকি। তার স্বামী এই মাত্র রাক্ষসের পুরীত গেছে। অখন মদনকুমার যে ভাবে আছে, বুঝত পারতাছেনা যে এইডা রাক্ষসের পুরী। কারণ রাক্ষসটা একটা সুন্দর কন্যার রূপ ধইয়া তারে বিয়া কইরা রাখ্‌ছে। কোনো কালে যদি আর কোনো রাজপুত্রু হেই রাক্ষসের পুরে যায়, তবে হে পুরাণডারে খাইয়া নয়াডারে বিয়া করব। মধ্যম বইন তখন জিজ্ঞাসা করল—তবে হেই রাক্ষসটা মরব কি রকমে। বড় বইন কইল যে—রক্তের নদী আর হাড়ের পাড়[২]; তার মাঝখানে একটা অজাগর[৩] সাপ আছে। সাপটারে যদি কেউ মার্‌ত পারে তবে রাক্ষসটা মর্‌ব। কিন্তু তাতে আরও বিপদ; যুদি অজগরডার এক ফোডা[৪] রক্ত মাডিত পড়ে, তবে শত শত অজাগর অইব। তখন মধ্যম বইন জিজ্ঞাসা করল——তা অইলে এইডারে মারব কি কইরা[৫]? বড় বইন কইল যে, সতী কন্যা ছাড়া এই ডারে কেউ মারত পারব না। তখন মধ্যম বইন জিজ্ঞাসা করল—যদি মধুমালা হেই খানে যায়, তখন ত মদনকুমাররেও খাইয়া ফাল্‌ব। তবে আর মদনকুমাররে বাঁচাইব কি রকমে? বড় বইন কইল যে—তারও পথ আছে। হেই যে অজাগরের মাথায় মণিডা—হেইডা যদি আন্যা, যত গুলাইন্ হাড় আছে তার মধ্যে


  1. বুল্যা=(বলিয়া) উদ্দেশে।
  2. পাড়=পাহাড়।
  3. অজাগর=অজগর।
  4. ফোডা=ফোটা।
  5. ‘তা অইলে এইডারে মারব কি কইরা?’—তবে, ইহাকে কেমন করিয়া মারিবে?