পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

 কিরূপে ত্রিপুরারাজের সাহায্য লাভ করা যাইবে, এ সম্বন্ধে ইশাখাঁ তাজখাঁ ও বাজখাঁ নামক ত্রিপুরার সেনাপতিদ্বয়ের পরামর্শ চাহিলে তাঁহারা ইশাখাঁকে রাণী অমরাবতীর শরণাপন্ন হইতে উপদেশ দেন। তাঁহারা বলিলেন যে রাজা সমস্ত ব্যাপারেই রাণীর পরামর্শ মানিয়া চলেন। ইশাখাঁ রাণী অমরাবতীকে মাতৃসম্বোধন করিয়া এক আবেদন পত্র প্রেরণ করেন। মাতৃসম্বোধনে বাঙ্গালী রমনীর হৃদয় না গলিয়া পারে না; ইশাখাঁর প্রার্থনায় রাণী তাঁহার স্তন-ধৌত জল ইশাখাঁকে পান করিতে দেন। ইশা শ্রদ্ধা সহকারে তাহা পান করেন। ইহ। স্তন্যপানের তুল্য বলিয়া বিবেচিত হইল এবং তদবধি ইশাখাঁ রাণীর পালিত পুত্ররূপে গৃহীত হইলেন। আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, লং সাহেব রাজমালার সংক্ষিপ্ত ইংরেজী অনুবাদে এই ঘটনার যে বর্ণনা দিয়াছেন, তাহার মর্ম্ম এইরূপ—“ইশাখাঁ রাণীর স্নেহ অর্জ্জন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। রাণী গাত্রধৌত করিয়া সেইজল ইশাখাঁকে পান করিতে দিয়া তাঁহার ভক্তির পরীক্ষা করেন। ইশাখাঁ সেই জল পান করেন।” বৈদেশিক লেখকের পক্ষে ‘স্তনের’ জায়গায় ‘গাত্র’ লেখা হয়তঃ বা মার্জ্জনীয়। কিন্তু শ্রীযুক্ত কৈলাস চন্দ্র সিংহ মহাশয়ের ন্যায় বাঙ্গালী পণ্ডিত কিরূপে এই বিবরণটি নিম্নলিখিত ভাবে বিকৃত করিলেন, তাহাই আশ্চর্য্যের বিষয়, তাঁহার লেখা এইরূপ “অমর মাণিক্যের রাজ্ঞীও ইষাখাঁকে পাদোদক প্রেরণ করিয়া বলিয়া পাঠাইলেন”—ইত্যাদি। তিনি হয়ত বিলাতী শিষ্টতা ও রুচির খাতিরে স্তন ধৌত করিবার ব্যাপার উল্লেখ করিতে লজ্জা পাইয়া তৎস্থলে ‘পাদোদক’ ব্যবহার দ্বারা মার্জ্জিত রুচির পরিচয় দিয়াছেন। কিন্তু আমাদের দেশে মাতৃস্তনের উল্লেখে যে কোনই দোষ হইতে পারেনা, পরন্তু তাহা যে পবিত্র ভাবই বহন করে, ইহা বোধ হয় সিংহ মহাশর ভুলিয়া গিয়াছিলেন।

 ইশাখাঁর প্রতি রাজা অমরমাণিক্য পূর্ব্ব হইতেই সন্তুষ্ট ছিলেন; এই ব্যাপারে আরও প্রীতিলাভ করিয়া তাঁহাকে পঞ্চাশ হাজার সৈন্য দিয়া সাহায্য করেন। ইশাখাঁ সৈন্য সমভিব্যাহারে সার পরগণায় উপস্থিত হইলেই দিল্লীসেনাপতি অবিলম্বে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিলেন। কথিত আছে, ইশাখাঁ রাজানুগ্রহের নিদর্শন স্বরূপ বহু উপঢৌকন প্রাপ্ত হন। কিন্তু রাজমালাকার