পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সুরৎ জামাল ও অধুয়া
৪২৫

আহা রে পরাণের পুত্র যাইবা কোন্ ঠায়ে।
কি কথা কইয়া যাও অভাগিনী মায়ে।
(আরে পুত্র) আঁখির না তারা তুই পরাণ-পুতলী॥
কেমন কর‍্যা যাইবা পুত্র বুক কর‍্যা খালি॥২৪
আর কি দেখিবাম চক্ষে তোমার চান্ বদন!
আর না শুনিবাম তোর মধুর বচন।
আর না ডাকিবা পুত্র মাও যে বলিয়া ৷
আর না লইবাম তোরে কোলেতে টানিয়া॥২৮
মায় সে জানে মায়ের বেদন আর জানিবে কে।
প্রাণের পুত্র ছাড়া মায়ের আর বা আছে কে॥
কার বা ফলন্ত গাছ ফালিলাম কাটি।
কিসের কারণে হইলাম আমি পুত্র-শোগী[১]৩২
কারবা ঘরের ধন করিয়াছিলাম চুরি।
কি পাপে হারাই পুত্র বুঝিতে না পারি॥
তুই বিনে মোর আর নাহি অন্য জন।
ঘুম থাক্যা উঠ্যা দেখ্‌বাম কার চান বদন॥৩৬
অঞ্চলের নিধি পুত্র অন্ধের লড়ী।
আইজ হইতে গিরবাস[২] কারে লইয়া করি॥

এইরূপে কান্দে বিবি আক্ষেপ করিয়া।
তার পর কিবা হইল শুন মন দিয়া॥৪০
মায়ের চরণে জামাল ছেলাম জানাল।
কান্দিয়া মায়ের আগে কহিতে লাগিল॥
শুন শুন মা জননী বিদায় দেও গো মোরে।
জঙ্গেতে যাইবাম আমি বলি যে তোমারে॥৪৪
দুয়া[৩] যে করিয়ো মোরে যেন ফিরি।
রণ জিতিয়া আস্যা তোমায় সেলাম করি॥


  1. পুত্র শোগী=পুত্র-শোকী।
  2. গিরবাস=গৃহবাস।
  3. হুয়া (দোয়া)=আশীর্ব্বাদ।