পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪৮
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

ফিরোজ ফকীরের কথা দেওয়ান শুনিয়া
ফকীরে আনিতে লোক দিল পাঠাইয়া॥

এহিত খবর যখন ফিরোজ খাঁ শুনিল
আন্দরে যাইতে দেওয়ান উছিল্লা[১] পাইল॥১০২
ফকীর দরবেশ লোক নাহি জানা শুনা
বাদশার আন্দরে যাইতে নাহি তার মানা।

খবর পাইয়া ফকীর দেওয়ান কোন কাম করিল
উমর খাঁ দেওয়ানের আন্দরেতে চলিল॥১০৬
সখিনা সুন্দরী দেখ এমন সময়ে
দীঘির পাড়েতে আইলা কিসের লাগিয়ে॥
তার পরে বসিয়া কন্যা সানে বান্ধা ঘাটে
পায়ের মেন্দী[২] মাঞ্জ্যা তুলে জলের যে ঘাটে॥১১০
জলের যে ঘাট তাতে হইল পশর
চান্দ যেমন ঝিলমিল করে পানির ভিতর রে।
দেখিয়া ফিরোজ সাহেব সখিনায় চিনিল
তস্‌বীর আর মানুষে আসমান পাতাল লাগিল[৩]১১৪
তস্‌বীরে এমন রূপ আঁকা নাহি যায়
অঙ্গের লাবনি যার মাটি বইয়া যায়[৪]


  1. উছিল্লা=অছিলা, অজুহাৎ, সুযোগ। নাহি জানা শুনা=জানা শুনা না থাকিলেও।
  2. মেন্দী=এক প্রকার ছোট গাছ; ইহা পত্র-বহুল; এই গাছের পাতার রস লাল। ইহা মুসলমান রমণীদের অলক্তক স্বরূপ। মুন্সী মৌলবীরা ইহা দ্বারা দাড়ি রঙ্গাইয়া থাকেন। এই রীতি অ্যাপি পূর্ব্বরঙ্গে চলিত আছে। মাঞ্জ্যা=মাজিয়া, ঘসিয়া উঠাইল।
  3. আসমান পাতাল লাগিল=আকাশ-পাতাল প্রভেদ বোধ হইল।
  4. “অঙ্গের..........লাবনী যায়=“ঢলঢল কাঁচা অঙ্গের লাবণী অবনী বহিয়া যায়” জ্ঞানদাস। ‘দেওয়ান ভাবনা’, “ঈশাখাঁ” প্রভৃতি পালায় ও এই ভাবের পদ আছে।