পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৫৫

সাত মাইল দূরে আকালিয়া খাল এবং শীতলাক্ষার সঙ্গমস্থল হইতে অনতিদূরে অবস্থিত। এই দেওয়ানবাগে ১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে মৃত্তিকাখননকালে সাতটি কামান প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছিল। ঢাকার তদানীন্তন ম্যাজিষ্ট্রেট এস, ই, ষ্টিন্‌টন্‌ সাহেব এই কামানের বর্ণনা লিখিবার জন্য টেপলটন্ সাহেবের হস্তে উহা প্রদান করেন। ষ্টেপলটন্ সাহেব ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দের এসিয়াটিক সোসাইটি-পত্রিকায় অক্টোবর সংখ্যায় এই কামানগুলির বিস্তৃত বিবরণ প্রদান করিয়াছেন। এই কামানগুলির প্রথমটি ব্যাঘ্রমুখাকৃতি এবং শের সাহের নামাঙ্কিত। ইহাতে ৯৪৯ হিজরী সন (১৫৪২ খ্রীঃ) উৎকীর্ণ। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থটি অনেকটা একই ধরণের এবং উপরিভাগে ব্যাঘ্রমুখের ন্যায় আকৃতিবিশিষ্ট। এই ব্যাঘ্র (শের) শের-সাহের রাজ-চিহ্ন বলিয়াই মনে হয়। অপর তিনটি কামান নিশ্চয়ই ইশাখাঁর। প্রথমটি তাঁহার নামাঙ্কিত; ২য়, ৩য়টিও একই রকমের। এই সাতটি কামান দেওয়ানদিগেরই সম্পত্তি ছিল। প্রথম কামানটিতে উৎকীর্ণ রহিয়াছে যে শের সাহ ১৫৪২ খ্রীষ্টাব্দে ইহা প্রস্তুত করান। কিন্তু ইহাও প্রণিধানযোগ্য যে কামানের বিপরীতদিকে ভগ্নস্থানের নিম্নে বাঙ্গালা ভাষায় “তরপ-রাজ” কথাটি লিখিত রহিয়াছে।

 আমরা পূর্ব্বেই রাজমালা হইতে দেখাইয়াছি যে ইশাখাঁ এবং যুবরাজ রাজধর তরপের পাঠানরাজা ফতেখাঁর বিরুদ্ধে অভিযান করিয়া তাঁহাকে পরাজিত করেন। এই ফতেখাঁ নিশ্চয়ই উত্তরাধিকারসূত্রে অথবা অন্য কোন উপায়ে শের সাহের নিকট হইতে এই কামান সাতটি লাভ করিয়া তাহার অপরপার্শ্বে বাঙ্গালায় “তরপ-রাজ” এই কথাকয়টি উৎকীর্ণ করিয়া থাকিবেন। শের সাহ্ উত্তরপশ্চিমাঞ্চল হইতে আসেন; এই জন্য তাঁহার নাম ফরাসীভাষায় উৎকীর্ণ হইয়াছে। তখন ফার্সী দিল্লী ও পশ্চিমভারতের অন্যান্য মুসলমানাধিকৃত প্রদেশ সমূহের রাজভাষা ছিল। কিন্তু পূর্ব্ববঙ্গে শ্রীহট্ট, ত্রিপুরা ও আসামাঞ্চলে ১৪শ হইতে ১৮শ শতাব্দী পর্য্যন্ত সর্ব্বত্র রাজভাষা বাঙ্গালাই ছিল। এই জন্যই পঞ্চম কামানটিতে ইশাখাঁর নাম বাঙ্গালায় উৎকীর্ণ দেখা যায়। সুতরাং শের সাহের চারিটি কামান কিরূপে ইশাখাঁর হস্তগত হয়, আমরা তাহার একটা আভাস পাইতেছি।