পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

আসিতেছেন। কোন কোন লেখক সোণামণি শব্দটিকে বিশুদ্ধ করিয়া স্বর্ণময়ীতে পরিণত করিয়াছেন। ইহাতে মনে হয়, ঐ কন্যা প্রথমে আত্মীয়স্বজনের নিকট নিজের আদুরে নামে অর্থাৎ সোণা বা সোণামণি বলিয়া পরিচিত। ছিলেন; কিন্তু তাঁহার যে পোষাকী নামটি ছিল, মুসলমান অন্তঃপুরে প্রবেশ করিয়া তিনি অধিকতর মর্য্যদাজ্ঞাপক মনে করিয়া সেই নামে আত্মপরিচয় দিয়াছিলেন। পালাগান সমূহে অনেক সময় নাম লইয়া এইরূপ গোলমাল ঘটিয়াছে। রাজদরবারের কাগজ পত্রে যে নাম ব্যবহৃত হইয়াছে, সাধারণের নিকট প্রচলিত পালাগান গুলিতে সেই নাম না দিয়া অনেক সময় সহজ এবং ছোট নামগুলি ব্যবহৃত দেখা যায়। মুসলমান অন্তঃপুরে নূতন লোকজনের মধ্যে আসিয়া সোণার পক্ষে ছোট-বেলার আদুরে নাম ত্যাগ করিয়া তাঁহার পোষাকী সুভদ্রানামে পরিচয় প্রদান কিছুই অস্বাভাবিক নহে। তবে তাঁহার মুসলমানী নাম যে “নিয়ামৎ জান” হইয়াছিল, এসম্বন্ধে সমস্ত বিবরণগুলিরই এক মত। সম্প্রতি আর একটি পালাগান মুন্‌সী জসীমুদ্দীন পাঠাইয়াছেন; তাহা মুসলমানের রচনা। উহাতে ‘সোণাই’ নামই পাওয়া গিয়াছে।

 ‘মসনদ আলি ইতিহাস’ কিংবা ষ্টেপল্‌টন প্রদত্ত দেওয়ান পরিবারের বংশতালিকা, ইহাদের কোনটিতেই সুভদ্রার পুত্রগণের নাম নাই। কিন্তু অধিকাংশস্থলেই মুসলমান-লেখক-বিরচিত দেওয়ান পরিবারের ইতিবৃত্তমুলক পালাগান গুলিতে আদম ও বিরাম এই দুইটি নাম সুপরিচিত এবং সচরাচর ব্যবহৃত। তাঁহাদের জীবনের ঘটনাসমূহের বিবরণও অনেক পালাগানে পাওয়া যাইতেছে। ইশাখাঁর যে হিন্দু-পত্নীর গর্ভে আদম ও বিরাম নামক দুইটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে, ইহাতে সন্দেহ করিবার কোনও কারণ দেখিনা। অবশ্য আদম ও বিরাম তাঁহাদের সর্ব্বজন পরিচিত ডাক নাম হইতে পারে; তাঁহাদের হয়ত মর্য্যাদাসূচক ভিন্ন নামও ছিল; কিন্তু আমরা এপর্য্যন্ত তাঁহাদের অপর কোনও নাম পাই নাই। ইশাখাঁর মৃত্যুর পর সোণামণি অথবা সুভদ্রার পিতৃ-গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন এবং ধর্ম্মত্যাগিনী হইলেও ব্রহ্মচারিণীভাবে অবস্থিতির বিষয় দুর্গাচরণ সান্ন্যাল মহাশয় লিখিয়াছেন। তিনি বলেন হৈবৎপুরের দেওয়ানেরা ইশাখাঁর হিন্দু বেগমের গর্ভজাত