পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

জানি না। ত্রিপুরারাজের অধীনস্থ উক্ত দেওয়ান পরিবারের এই উপাধি গ্রহণের অন্য কারণও থাকিতে পারে। ত্রিপুরারাজের জ্যেষ্ঠপুত্র ‘যুবরাজ’ এবং দ্বিতীয় পুত্ত্র ‘ঠাকুর’ উপাধিতে পরিচিত হন। তাঁহাদের অধীনস্থ দেওয়ান পরিবার এই প্রথার অনুকরণ করিয়া থাকিতে পারেন।

 এ সম্বন্ধে আমার অপর একটি অনুমান আছে, তাহার সপক্ষে কোনও ঐতিহাসিক যুক্তি দিতে না পারিলেও আমি অনুমানটি সাধারণের গোচর করিতেছি।

 সকলেই অবগত আছেন, ইশাখাঁর বখতিয়ারপুরের প্রাসাদবাটী ৫৮৩ খ্রীষ্টাব্দে সাহবাজখাঁর পরিচালিত সম্রাট্ বাহিনী কর্ত্তৃক ধ্বংসীভূত হয়। ওয়াইজ সাহেব তাঁহার পূর্ব্বোক্ত প্রবন্ধে এ বিষয় উল্লেখ করিয়াছেন। ইশাখাঁর সম্বন্ধীয় দ্বিতায় পালাগানটিতে নিম্নলিখিত বিস্ময়কর কাহিনীটি পাওয়া যাইতেছে। মোগল সৈনিকেরা একদা ইশাখাঁর বংশধরদের অন্তঃপুর দর্শন করায় সেই বংশধর নাকি অপমান বোধ করিয়া স্বয়ং জঙ্গলবাড়ীর প্রাসাদে অগ্নিসংযোগ পূর্ব্বক স্বীয় পরিবার ধ্বংস করিয়া ফেলেন। পালাগানের এই কথা সত্য হইলে এই দেওয়ানের পারিবারিক মর্য্যাদাবোধ উন্মত্ততায় পরিণত হইয়াছিল। কিন্তু এই ব্যাপারটি আমার নিকট কল্পনামূলক বলিয়া মনে হয়। নিরক্ষর কৃষক রচিত পালাগানগুলির বিবরণ সাধারণতঃ সত্য হয়; অন্ততঃ তাহাদের ভ্রম-প্রমাদ গুলি সরল বিশ্বাসানুমোদিত, কিন্তু অর্দ্ধশিক্ষিত গ্রাম্য লেখক যখন নিজের পাণ্ডিত্য প্রদর্শনের জন্য গল্প প্রণয়ন করেন, তখন তাহাতে তাঁহার কল্পনার উদ্দামলীলা অনেক সময় উৎকট হইয়া উঠে। দ্বিতীয় পালাটির রচয়িতা শেষোক্ত শ্রেণীর বলিয়া মনে হয়। তিনি লিখিয়াছেন যে, দেওয়ান আবদুল যখন শুনিতে পাইলেন, দিল্লীর সৈনিকেরা বাঁশের সিড়ি প্রস্তুত করিয়া তাহার সাহায্যে দেওয়ান-অন্তঃপুরে উঁকি মারিয়া দেখিয়াছে, তখন তাঁহার এতদূর গ্লানি ও অপমান বোধ হইল যে তিনি তৎক্ষণাৎ প্রাসাদের সমস্ত দ্বার রুদ্ধ করিবার আদেশ প্রদান করিয়া ইহাতে অগ্নিসংযোগ পূর্ব্বক স্বীয় পরিবারবর্গকে দগ্ধ করিয়া ফেলিলেন। একটি মাত্র প্রাণী রক্ষা পাইয়াছিল; সেটী ছয়মাসের শিশু মাচুম খাঁ। অন্তঃপুর হইতে একটি পরিচারিকা বাহিরের এক ধীবর রমণীর চুপড়িতে উক্ত শিশুকে নিক্ষেপ করিয়া