পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৬১

উহার প্রাণরক্ষা করে। দেওয়ান সাহেব এইরূপে নিজের পরিবার ধ্বংস করিয়া দিল্লীসৈনিকদের উপর প্রতিহিংস। লইলেন এবং স্বীয় মর্য্যদাবোধের একটা অদ্বিতীয় উদাহরণ প্রদান করিলেন!

 ব্যাপারটি আগাগোড়াই কাল্পনিক বলিয়া মনে হয়। তবে ইহার উল্লেখ করিবার আমার একটি কারণ আছে। দিল্লীর সম্রাট্‌বাহিনী এক সময় জঙ্গলবাড়ী প্রাসাদের বিরুদ্ধে অভিযান করিয়া উহার সম্পূর্ণ ধ্বংস সাধন করেন—এইরূপ কোনও ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতি কি এই ব্যাপার সঙ্কেত করিতেছে না? আদম ও বিরাম কেদার রায়ের কন্যাদ্বয়ের পাণিগ্রহণ করিয়া গৃহপ্রত্যাবর্ততনের পর এই ঘটনা ঘটিয়াছিল, এইরূপ লিখিত হইয়াছে। সুতরাং এই কাহিনীতে যদি সত্যের লেশমাত্রও থাকে, তাহা হইলে মনে হয় রাজকুমারেরা নিশ্চয়ই এই শোচনীয় দুর্ঘটনায় প্রাণত্যাগ করেন। মোগল সেনাক কর্ত্তৃক জঙ্গলবাড়ীর প্রাসাদধ্বংস এবং ফলে দেওয়ান পরিবারের বহু লোকের প্রাণনাশ সম্বন্ধে একটি লৌকিক বিশ্বাস প্রচলিত আছে। এইরূপ লোমহর্ষক ঘটনা বাস্তবিকই ঘটিয়া থাকিলে নিশ্চয়ই তাহা সাধারণের মনের উপর আঘাত করিয়া গিয়াছে। কিন্তু যে পালারচয়িতা ইশাখাঁর কীর্তিকলাপ সম্বন্ধে এইরূপ অদ্ভুত বিবরণ পর্য্যন্ত দিয়া গিয়াছেন যে তিনি হুমায়ুনের সমক্ষে সিংহাসনে উপবেশন করিয়া তাঁহাকে ভীত ও স্তম্ভিত করিয়াছিলেন, সেই পালার রচয়িতা কিরূপে মোগলদের হস্তে দেওয়ানপরিবারের এইরূপ ধ্বংসের কাহিনী লিপিবদ্ধ করিবেন? দেওয়ানদিগের পারিবারিক মর্য্যাদাবুদ্ধি কত বেশী, ইহারই একটী অতিরঞ্জিত পাড়াগেঁয়ে কল্পনা দ্বারা পরিচালিত হইয়া পালাগানরচক সম্ভবতঃ এই অপরূপ কাহিনীটি লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন। বহিঃ শত্রুর আক্রমণে প্রাসাদধ্বংস হয় নাই—দেওয়ানেরা নিজেই তাঁহাদের পারিবারিক মর্য্যাদার এইরূপ সমুচ্চ ধারণার বশবর্ত্তী হইয়া নিজেদের ঘরে আগুণ লাগাইয়া ছিলেন, এইরূপ একটা অত্যুৎকট কল্পনা দ্বারা গ্রাম্যকবি হয়ত সত্যগোপন করিবার চেষ্টা পাইয়া থাকিবেন।

 পালারচয়িতা আরও লিখিয়াছেন যে মোগল-সৈন্য সংখ্যায় সহস্র-পরিমিত ছিল এবং ছয় মাস যাবৎ দেওয়ান সাহেবই তাঁহাদের ব্যয়সঙ্কুলান করিয়াছিলেন। ইহাতে মনে হয়, হঠাৎ মোগল সৈন্যের সহিত দেওয়ানদিগের