পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৬৫

মৃত্যু হয়। পালাগানটিতে কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত বিবরণ প্রদত্ত হইয়াছে। মানসিংহ কতিপয় বিদ্রোহীকে দমন করিবার জন্য বঙ্গদেশে আগমন করেন এবং তিনি কেদাররায়ের সহিতও যুদ্ধ করিয়াছিলেন। কেদার রায় মানসিংহের সহিত যুদ্ধে আহত হইয়াছিলেন, ইহা অসম্ভব নহে। পালার বিবরণ অনুসারে যদি করিমুল্লাই বাস্তবিক কেদার রায়কে নিহত করিয়া থাকেন, তাহা হইলেও দিল্লীসম্রাটের নিকট মানসিংহই কেদাররায় বিজয়ী বলিয়া সম্ভবতঃ প্রতিষ্ঠার দাবী করিয়াছিলেন, যেহেতু গ্রাম্য-বীর করিমুল্লার কীর্ত্তি বোধ হয় বাঙ্গালার বাহিরে পঁহুছিতে পারে নাই। মনুয়ার খাঁর পালায় পাওয়া যাইতেছে যে, দিল্লীসেনার সাহায্যে জঙ্গলবাড়ীর সৈন্যকর্ত্তৃক শ্রীপুর ধ্বংস হইয়াছিল, সুতরাং করিমুল্লার বীরত্ব ও শৌর্য্যের কথা মোগল সেনাপতিরা চাপা দিয়া এই ব্যাপারের সমস্ত গৌরব নিজেরাই আত্মসাৎ করিয়াছিলেন, ইহা কিছুই বিচিত্র নহে।

 মুসলমানী ইতিবৃত্তসমূহে পাওয়া যায়, ইশাখাঁর রাজা ঘোড়াঘাট হইতে সমুদ্র পর্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তবে একথা সত্য যে, বাঙ্গালার অন্যান্য কেদার রায়, চাঁদ রায়, ভুঞারা তাঁহাকে মণ্ডলাধিপতি বলিয়া মানিতেন। প্রতাপাদিত্য প্রভৃতি ভূঞা রাজারা তাঁহার প্রতিদ্বন্দী ছিলেন।

 এই পর্য্যন্ত বলা যাইতে পারে যে, ইশাখাঁ তাঁহাদের কাহারও কাহারও অপেক্ষা বলশালী ছিলেন। কেদার রায় পদ্মাতীরস্থ শ্রীপুরে রাজত্ব করিতেন, এই পদ্মার তীরেই ইশাখাঁর পূর্ব্বতন রাজধানী খিজিরপুর অবস্থিত ছিল। শ্রীপুররাজের ঐশ্বর্য্যের কথা অনেক গ্রন্থে পাওয়া যায়; কেদার রায় এক সময় শ্রীপুর হইতে ঢাকা পর্য্যন্ত প্রশস্ত জনপদে স্বীয় ক্ষমতা পরিচালনা করিতেন। কেদার রায় এবং চাঁদরায়ের বিক্রমপুর পরগণার উপরেও একাধিপত্য ছিল। পদ্মার অপর পারে খিজিরপুরে ইশাখাঁ রাজত্ব করিতেন, এবং ইশাখাঁর সহিত চাঁদরায়-কেদাররায় ভ্রাতৃদ্বয়ের সর্ব্বদা যুদ্ধবিগ্রহ হইত। রাজবাড়ীর যে বিখ্যাত মন্দির বাঙ্গালাদেশের স্থাপত্যশিল্পের একটি শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন ছিল, এবং ওয়াইজ় সাহেব সবিস্তারে যে মন্দিরের বিবরণ দিয়াছেন, তাহা সম্প্রতি করাল পদ্মাগর্ভে বিলীন হইয়াছে। লৌকিক সংস্কারে এই মন্দির কেদাররায়ের নামের সহিত বিজড়িত। কিন্তু এই মন্দিরে