পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(১২) ছুরত জামাল ও অধুয়াসুন্দরী।

(৩৯১—৪১৩ পৃঃ)

 জন্মান্ধ কবি ফৈজু ফকির এই পালার রচয়িতা; ইহার নাম ভণিতায় পাঁচ বার পাওয়া গিয়াছে। কবির পিতা, মাতা বা ভ্রাতা কেহই জীবিত ছিলেন না, এতদ্ব্যতীত তিনি নিজের আর কোনও পরিচয় দেন নাই। চন্দ্রকুমারও কবির সম্বন্ধে বেশী কিছু তথ্য দিতে পারেন নাই। চন্দ্রকুমার শ্রীহট্টের অন্তঃপাতী বাণিয়াচঙ্গে গিয়া বহু শ্রম সহকারে তিনজন গায়েনের নিকট হইতে পালাটী সংগ্রহ করেন।

 জঙ্গলবাড়ীর দেওয়ানদিগের ন্যায় বাণিয়াচঙ্গের দেওয়ানেরাও পূর্ব্বে হিন্দু ছিলেন। চতুর্দ্দশ শতাব্দীতে বাণিয়াচঙ্গের ব্রাহ্মণরাজা গোবিন্দ খাঁ ইস্‌লাম ধর্ম্ম গ্রহণ করিয়া হবিব খাঁ নাম ধারণ করেন। বাণিয়াচঙ্গ শ্রীহট্টের একটি গণ্ডগ্রাম; এই গ্রামের লোকসংখ্যা এখনও ত্রিশ হাজার। হবিব খাঁ শুধু বাণিয়াচঙ্গের অধিপতি ছিলেন না; পার্শ্ববর্ত্তী লাউড় পরগণাও তাঁহার অধীনে ছিল। তিনি শ্রীহট্টের ২৪টী পরগণার মালিক ছিলেন। বাণিয়াচঙ্গের অবস্থিতি এইরূপ—উত্তরে ২৪°৩১′, পূর্ব্বে ৯১°২০′। লাউড়ের জঙ্গলে এখনও বাণিয়াচঙ্গ হাব্‌লি নামক দুর্গের ভগ্নাবশেষ বিদ্যমান রহিয়াছে; উহা বাণিয়াচঙ্গের দেওয়ানদিগের লাউড়ের উপর আধিপত্যের সাক্ষ্যপ্রদান করিতেছে। দেওয়ানপরিবারের পূর্ব্ব‌গৌরব এখনও ক্ষীণভাবে বর্ত্তমান রহিয়াছে; দেওয়ান আজমান খাঁ এই প্রসিদ্ধ বংশের বর্ত্তমান প্রতিনিধি।

 এই দেওয়ানদিগের একটি আখ্যায়িকা অবলম্বনে পালাটি রচিত। দেওয়ানদের বংশলতায় আলাল খাঁ, দুলাল খঁ। ও জামাল খাঁ এই তিনটি নাম পাই নাই। ইস্‌লামধর্ম্মে দীক্ষিত হবিব খাঁর পঞ্চম বংশধররূপে আমরা এক জামাল খাঁর নাম পাইতেছি। কিন্তু বংশলতায় জামাল খাঁর পিতার নাম আহম্মদ খাঁ পাওয়া যায়—পালার কথিত আলাল খাঁ নহে। সুতরাং এই দুই জামাল খাঁ একই ব্যক্তি, এরূপ মনে হয় না। তবে দেওয়ানদিগের সাধারণ্যে