পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

অভিযান করিয়া বলপূর্ব্বক তঅধুয়া সুন্দরীকে হরণ করিবেন—ইহাতে আশ্চর্য্যের বিষয় কিছুই নাই।

 এই সমস্ত মুসলমান যদি পারস্য অথবা অন্য কোন পাশ্চাত্য প্রদেশ হইতে আসিয়া এদেশে হিন্দুদের প্রতিবেশীরূপে বসবাস করিতেন, তাহা হইলে বোধ হয় হিন্দুদের সঙ্গে এরূপ বিবাদের সৃষ্টি হইত না; হিন্দুমহিলাদিগের প্রতিও হয়ত তাঁহাদের এরূপ লুব্ধ দৃষ্টি পড়িত না। রাজপুতানার ইতিহাসে অবশ্য এই নিয়মের অন্যথা হইতে দেখা গিয়াছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ইহা বলা যায় যে বিক্রেতা পাঠানেরা নানাভাবে হিন্দুকে নির্জ্জিত ও পদানত করিবার জন্যই এইরূপ অত্যাচার করিতেন; অন্য উদ্দেশ্যে নহে। উদার রাষ্ট্র নীতির বশবর্ত্তী হইয়া আকবর হিন্দুদের সঙ্গে আত্মীয়তা করার প্রয়াসী ছিলেন।

 কিন্তু বঙ্গদেশে এইরূপ ব্যাপারের অন্য কারণ ছিল। উভয় সম্প্রদায় মূলতঃ একই জাতি এবং সেইজন্য একই প্রকারের রুচি ও সংস্কারের বশবর্ত্তী ছিলেন, ইহাই বোধ হয় এইরূপ সঙ্ঘর্ষের কারণ হইত। সুতরাং এদেশে হিন্দুকন্যাদিগের প্রতি মুসলমানের আসক্তি কতকটা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল।

 এই পালাটিতে ফার্সী অথবা উর্দ্দূ শব্দের প্রয়োগ অপেক্ষাকৃত অধিক। কিন্তু তাহা হইলেও ইহার ভাষ। বটতলা-প্রকাশিত মুসলমানী পুথির অনুরূপ “মুসলমানী বাঙ্গালা” নহে। বাঙ্গালী মুসলমানেরা কথাবার্ত্তায় যে পরিমাণে উর্দ্দূ শব্দের প্রয়োগ করিয়া থাকেন, এই পালাটিতে উর্দ্দূ শব্দের প্রয়োগ সেইরূপই—তাহা অপেক্ষা বেশী নহে। হিন্দু পাঠকের নিকট বিসদৃশ এবং দুর্ব্বোধ্য ঠেকিতে পারে, এই পালাগানটিতে এরূপ শব্দ বেশী ব্যবহৃত হয় নাই। বস্তুতঃ, যে সমস্ত উর্দ্দূ শব্দ আমাদের কথাবার্ত্তার ভাষায় আসিয়া পড়িয়াছে এবং যাহা বাঙ্গালী হিন্দু-মুসলমান উভয়েই বুঝেন—লিখিত ভাষায় সে গুলির প্রচলন হওয়া অসঙ্গত নহে। কারণ ইহাতে বাঙ্গালা ভাষা হিন্দুমুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশের শক্তি অর্জ্জন করিতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে সংস্কৃতাভিমানিগণ কথাবার্ত্তায় প্রচুর পরিমাণে উর্দ্দূশব্দের ব্যবহার করিলেও লেখার সময় যথাসাধ্য উর্দ্দূ পরিহার করিয়া থাকেন। নিম্নলিখিত শব্দগুলি এই শ্রেণীভুক্ত—যথা, সল্লা, বখ্‌শিষ্, লাখেরাজ, গোলাম, আপশোষ, দুষমণ, বাঁদী, শয়তান, বদনাম, মুস্কিল,