পাতা:পূজা ও সমাজ - অবিনাশচন্দ্র চক্রবর্ত্তি.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sዓ e পূজা ও সমাজ । হইবে, তথাপি শৈত্য প্ৰাপ্ত হইবে না। খলতা শক্তির কাছে ঘোঁসিতে পারে না। শৃগালের বল নাই, তাই সে ছল-চাতুরী খেলে। সিংহের বল আছে, তাই সে শৃগালের পথে চলে না। খলতা ও ছল দুৰ্ব্বলের বল। শক্তি ও অশক্তির স্বভাবই এইরূপ। শক্তিমান পুরুষ চাটুপ্রিয় নহেন। অন্তের নিকট আত্মগুণানুবাদ শুনিতে তিনি সমুৎসুক নহেন, আবার স্বার্থের খাতিরে দীনবেশে ধনীর দ্বারস্থ হইয়া ধনার তোষামোদ করিতে ঘৃণা করেন। সুতরাং প্রকৃতপক্ষে চাটুতা অক্ষমতারই পূজা । শক্তির পূজা নতে, শক্তিহীনতার পূজা। নির্ধন সমাজে ধনের মান খুব বেশী। অজ্ঞসমাজেও সেইরূপ বিদ্যার গৌরব অধিক হওয়া উচিত বটে, কিন্তু সেগানেও ধনের আদর অত্যধিক । উভয়ত্ৰই ধনী বিশেষ সন্মানিত । উভয় সমাজেই এতদ্দেশে পূৰ্ব্বপুরুষাজ্জিত ধনে ধনবান ব্যক্তি গুণহীন হইয়াও দেবতার পূজা পাইয়া থাকেন। আবার, আধুনিক শিক্ষিত সমাজে পদেব গৌরব অতিমাত্ৰ। প্ৰায় সকলেই পদপ্রার্থী। পদহীন ব্যক্তি পদের জন্য পদস্থ ব্যক্তির, ও নিম্নপদস্থ, উৰ্দ্ধপদের জন্য উচ্চপদস্থের দ্বারে চাটুতার অভিনয় করে। পরের প্ৰসাদে ধন-উপার্জনকালে, শক্ত প্ৰতিযোগিতাস্থলে, অশক্ত ব্যক্তিরাই। চাটুতার আশ্রয় লয়। সেই জন্যই বোধ হয়, চাটুতার সহিত চাকরির সখ্যভাব দেখা যায়। যাহারা এই বিদ্যায় বিশারদ, তাহারা নিজেকে শারদগগনের নক্ষত্র, ‘আসমান তারা’ বলিয়া মনে করিলেও তাঁহাদের মন । উৰ্দ্ধগামী নহে। চাটুতা, আরাধ্যদেবতার পাদুকা বহন করিয়া প্ৰসাদ লাভের জন্য কেবলই ব্যস্ত। ইহাকে কেবল স্বর্গেই উঠায় ! কিন্তু শনিঠাকুরের মতন এই দেবতার মনটা তরল, অস্থির ; মেজাজ-এই নরম, এই গরম। কখন কি মরজি হয়, বুঝা বড় কঠিন। ইনি ক্ষণে তুষ্ট, ক্ষণে রুষ্ট ।