পাতা:পূজা ও সমাজ - অবিনাশচন্দ্র চক্রবর্ত্তি.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূজা ও সমাজ । as: হইতে পারি। মৃন্ময়াদি মূৰ্ত্তি অবলম্বনে যে সাধনপথ তাহা বিরুদ্ধপথ, এইরূপ কেহ কেহ মনে করিতে পারেন, কিন্তু তাহা কি সত্য ? আমি রামেশ্বরসেতুবন্ধ যাইতে ইচ্ছা করিয়া যদি ক্রমাগত কেবল উত্তরদিকেই চলিতে থাকি, তবে অভীষ্টস্থানে কস্মিনকালেও পহুছিতে পারিব না। কেননা আমি বিরুদ্ধ পথে চলিয়াছি, পরন্তু যদি আমি গন্তব্যস্থানে উপস্থিত, হইতে পারি, তবে বিপরীতপথে চলি নাই একথাই বুঝিতে হইবে। ” ভগবৎসৃষ্ট সৌরমূৰ্ত্তিতে ঋষিগণ ভগবৎশক্তি উপলব্ধি করিয়া সেই শক্তিরই উপাসনা করিতেন ! “ভর্গো দেবস্ত ধীমহি”। যিনি সূৰ্য্যের ভিতরে থাকিয়া সূৰ্য্যকে তেজোময় করেন, সেই জ্যোতিৰ্ম্ময় দেবতাকে ধ্যান করি । গায়ত্ৰী-মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া আৰ্য্যগণ ধ্যানে মগ্ন থাকিতেন এবং তঁহাদের ংশধর দিগকেও সেইরূপ করিতে উপদেশ দিয়াছেন । যোগিগণ ওঁকার সাধনা বলে অন্তরের অন্তস্তলে বিরাজমান পরমাত্মাকে ধ্যান করিতে করিতে তন্ময় হইয়া প্ৰশান্তচিত্তে কেবল বিমল আনন্দামৃতপানে নিরবচ্ছিন্ন সুখ সম্ভোগ করিতেন । ওঁকার জপের অর্থ কি ? ব্ৰহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর অর্থাৎ ব্রহ্মের সৃজ্যশক্তি, পালনীশক্তি ও সংহাবশক্তির চিন্তন ও মনন । যোগিরা ব্ৰহ্মশক্তিরই ধ্যান ধারণা করিয়া সিদ্ধিলাভ করিতেন । স্বাভাবিভক্ত কবিরা স্বভাবের মনোহর দৃশ্য দেখিয়া ভগবৎপ্রেমে ও ব্রহ্মসত্তায় ডুবিয়া কি এক অনির্বচনীয় সুখসম্ভোগ করিতেন । তঁহারাও ব্ৰহ্মশক্তিরই মহিমায় মোহিত হইতেন, র্তাহারাও ব্ৰহ্মশক্তিরই নীরবস্তাবক, নিষ্কাম উপাসক। আবার মানবহস্তনিৰ্ম্মিত কৃত্ৰিম জড় প্ৰতিমা অবলম্বনে যে সকল সাধক সিদ্ধ হইয়াছেন। তাহারাও সেই এক ব্ৰহ্মশক্তিরই পূজক। বস্তুতঃ ব্ৰহ্ম-মহিমায় হৃদয় পূর্ণ হইয়া জড় উড়িয়া গেলে কেবল চৈতন্যশক্তির বিদ্যমানত অনুভব করিতে পারিলেই সিদ্ধিলাভ হয় ।