কৃতজ্ঞ
বলেছিনু “ভুলিব না”, যবে তব ছল-ছল আঁখি
নীরবে চাহিল মুখে। ক্ষমা কোরো যদি ভুলে থাকি।
সে যে বহুদিন হ’লো। সেদিনের চুম্বনের পরে
কত নব বসন্তের মাধবী-মঞ্জরী থরে থরে
শুকায়ে পড়িয়া গেছে; মধ্যাহ্ণের কপোত-কাকলি
তা’রি পরে ক্লান্ত ঘুম চাপা দিয়ে এলো গেলো চলি’
কতদিন ফিরে ফিরে। তব কালো নয়নের দিঠি
মোর প্রাণে লিখেছিলো প্রথম প্রেমের সেই চিঠি
লজ্জাভয়ে; তোমার সে হৃদয়ের স্বাক্ষরের পরে
চঞ্চল আলোক ছায়া কত কাল প্রহরে প্রহরে
বুলায়ে গিয়েছে তুলি, কত সন্ধ্যা দিয়ে গেছে এঁকে
তা’রি পরে সোনার বিস্মৃতি, কত রাত্রি গেছে রেখে
অস্পষ্ট রেখার জালে আপনার স্বপনলিখন,
তাহারে আচ্ছন্ন করি। প্রতি মুহূর্ত্তটি প্রতিক্ষণ
বাঁকা-চোরা নানা চিত্তে চিন্তাহীন বালকের প্রায়
আপনার স্মৃতি-লিপি চিত্ত-পটে এঁকে এঁকে যায়,
লুপ্ত করি’ পরস্পরে বিস্মৃতির জাল দেয় বুনে।
সেদিনের ফাল্গুনের বাণী যদি আজি এ ফাল্গুনে
ভুলে থাকি, বেদনার দীপ হ’তে কখন নীরবে
অগ্নিশিখা নিবে গিয়ে থাকে যদি, ক্ষমা কোরো তবে।