পাতা:পূরবী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২০৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৯৩
চিঠি

রাজ-প্রতাপের দম্ভ সে তো এক-দমকের বায়ু,
সবুর ক’র্‌তে পারে এমন নাই তো তাহার আয়ু।
ধৈর্য্য বীর্য্য ক্ষমা দয়া ন্যায়ের বেড়া টুটে
লোভের ক্ষোভের ক্রোধের তাড়ায় বেড়ায় ছুটে ছুটে।
আজ আছে কাল নাই ব’লে তাই তাড়াতাড়ির তালে
কড়া মেজাজ দাপিয়ে বেড়ায় বাড়াবাড়ির চালে।
পাকা রাস্তা বানিয়ে বসে দুঃখীর বুক জুড়ি’,
ভগবানের ব্যথার পরে হাঁকায় সে চার-ঘুড়ি।
তাই তো প্রেমের মাল্য গাঁথার নাইকো অবকাশ,
হাত-কড়ারই কড়াকড়ি, দড়াদড়ির ফাঁস।
শান্ত হবার সাধনা কই, চলে কলের রথে,
সংক্ষেপে তাই শান্তি খোঁজে উল্‌টোদিকের পথে।
জানে সেথায় বিধির নিষেধ, তর্ সহে না তবু,
ধর্ম্মেরে যায় ঠেলা মেরে গায়ের-জোরের প্রভু।
রক্ত-রঙের ফসল ফলে তাড়াতাড়ির বীজে,
বিনাশ তা’রে আপন গোলায় বোঝাই করে নিজে।
বাহুর দম্ভ, রাহুর মতো, একটু সময় পেলে
নিত্যকালের সূর্য্যকে সে এক-গরাসে গেলে।
নিমেষ পরেই উগ্‌রে দিয়ে মেলায় ছায়ার মতো,
সূর্য-দেবের গায়ে কোথাও রয় না কোনো ক্ষত।
বারে বারে সহস্রবার হ’য়েছে এই খেলা,
নতুন রাহু ভাবে তবু হবে না মোর বেলা।
কাণ্ড দেখে পশুপক্ষী ফুক্‌রে ওঠে ভয়ে,
অনন্ত দেব শান্ত থাকেন ক্ষণিক অপচয়ে॥

১৩