পাতা:পূরবী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২০৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পূরবী
১৯৪

টুট্‌লো কত বিজয়-তোরণ, লুট্‌লো প্রাসাদ-চুড়ো,
কত রাজার কত গারদ ধূলোয় হ’লো গুঁড়ো।

আলিপুরের জেলখানাও মিলিয়ে যাবে যবে
তখনো এই বিশ্ব-দুলাল ফুলের সবুর স’বে।
রঙীন কুর্ত্তি, সঙীন মূর্ত্তি রইবে না কিচ্ছুই,
তখনো এই বনের কোণে ফুট্‌বে লাজুক জুঁই।
ভাঙ্‌বে শিকল টুকরো হয়ে, ছিঁড়্‌বে রাঙা পাগ,
চূর্ণ-করা দর্পে মরণ খেল্‌বে হোলির ফাগ।
পাগ্‌লা আইন লোক হাসাবে কালের প্রহসনে,
মধুর আমার বঁধু রবেন কাব্য-সিংহাসনে।
সময়েরে ছিনিয়ে নিলেই হয় সে অসময়,
ক্রুদ্ধ প্রভুর সয় না সবুর, প্রেমের সবুর সয়।
প্রতাপ যখন চেঁচিয়ে করে দুঃখ দেবার বড়াই,
জেনো মনে, তখন তাহার বিধির সঙ্গে লড়াই।
দুঃখ সহার তপস্যাতেই হোক্ বাঙালীর জয়,
ভয়কে যারা মানে তা’রাই জাগিয়ে রাখে ভয়।
মৃত্যুকে যে এড়িয়ে চলে মৃত্যু তা’রেই টানে,
মৃত্যু যারা বুক পেতে লয় বাঁচ্‌তে তা’রাই জানে।
পালোয়ানের চেলারা সব ওঠে যেদিন ক্ষেপে,
ফোঁসে সর্প হিংসা-দর্প সকল পৃথ্বী ব্যেপে,
বীভৎস তা’র ক্ষুধার জ্বালায় জাগে দানব ভায়া,
গর্জ্জি’ বলে আমিই সত্য, দেব্‌তা মিথ্যা মায়া;
সেদিন যেন কৃপা আমায় করেন ভগবান,
মেশীন্-গান্-এর সম্মুখে গাই জুঁই ফুলের এই গান—