বাতাস কেবল ঘুরে বেড়ায় পাইন্ বনের পল্লবে,
নিঃশ্বাসে তা’র বিষ নাশে আর অবল মানুষ বল লভে।
পাথর-কাটা পথ চলেছে বাঁকে বাঁকে পাক দিয়ে,
নতুন নতুন শোভার চমক দেয় দেখা তা’র ফাঁক দিয়ে।
দার্জ্জিলিঙের তুলনাতে ঠাণ্ডা হেথায় কম হবে,
একটা খদর চাদর হ’লেই শীত-ভাঙানো সম্ভবে।
চেরাপুঞ্জি কাছেই বটে, নামজাদা তা’র বৃষ্টিপাত;
মোদের পরে বাদল মেঘের নেই ততদূর দৃষ্টিপাত।
এখানে খুব লাগ্লো ভালো গাছের ফাঁকে চন্দ্রোদয়,
আর ভালো এই হাওয়ায় যখন পাইন্-পাতার গন্ধ বয়;
বেশ আছি এই বনে বনে, যখন-তখন ফুল তুলি,
নাম-না-জানা পাখী নাচে, শিষ দিয়ে যায় বুলবুলি।
ভালো লাগে দুপুর বেলায় মন্দমধুর ঠাণ্ডাটি,
ভোলায় রে মন দেবদারু-বন, গিরিদেবের পাণ্ডাটি।
ভালো লাগে আলো-ছায়ার নানারকম আঁক কাটা,
দিব্যি দেখায় শৈলবুকে শস্য-ক্ষেতের থাক কাটা।
ভালো লাগে রৌদ্র যখন পড়ে মেঘের ফন্দীতে,
রবির সাথে ইন্দ্র মেলেন নীল সোনালীর সন্ধিতে।
নয় ভালো এই গুর্খাদলের কুচ্-কাওয়াজের কাণ্ডটা,
তা ছাড়া ঐ ব্যাঘ্রপাইপ নামক বাদ্য-ভাণ্ডটা।
ঘন ঘন বাজায় শিঙা—আকাশ করে সর্গরম,
গুলিগোলার ধড়্ধড়ানি, বুকের মধ্যে থর্থরম্।
পাতা:পূরবী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৩৪
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৩
পূরবী