পাতা:পূর্ব-বাংলার গল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২২
পূর্ব-বাংলার গল্প

ফিরিতেছিল; পথের প্রান্তবর্তী বর্ষার জল-প্লাবিত গাঢ়শ্যাম শস্যক্ষেত্র চঞ্চল ছায়ালোকে বিচিত্র হইয়া উঠিতেছিল। হাটের কাছে একটা বৃহৎ রথ পড়িয়া ছিল এবং তাহার অদূরবর্তী মুদির দোকানে একদল বৈষ্ণব ভিক্ষুক গুপিযন্ত্র ও খোল করতাল -যোগে গান গাহিতেছিল—

এসো এসো ফিরে এসো—নাথ হে, ফিরে এসো!
আমার ক্ষুধিত তৃষিত তাপিত চিত,
বঁধু হে, ফিরে এসো!

 গাড়ি অগ্রসর হইয়া চলিল, গানের পদ ক্রমে দূর হইতে দূরতর হইয়া কানে প্রবেশ করিতে লাগিল—

ওগো নিষ্ঠুর, ফিরে এসো হে!
আমার করুণ কোমল, এসো!
ওগো সজলজলদস্নিগ্ধকান্ত সুন্দর, ফিরে এসো!

 গানের কথা ক্রমে ক্ষীণতর অস্ফুটতর হইয়া আসিল, আর বুঝা গেল না। কিন্তু গানের ছন্দে শশিভূষণের হৃদয়ে একটা আন্দোলন তুলিয়। দিল, তিনি আপন মনে গুন‍্গুন্ করিয়া, পদের পর পদ রচনা করিয়া যোজনা করিয়া চলিলেন, কিছুতে যেন থামিতে পারিলেন না—

আমার নিতি-সুখ, ফিরে এসো!
আমার চিরদুখ, ফিরে এসো!
আমার সব-সুখ-দুখ-মন্থন-ধন, অন্তরে ফিরে এসো!
আমার চিরবাঞ্ছিত, এসো!
আমার চিরসঞ্চিত, এসো!
ওহে চঞ্চল, হে চিরন্তন,
ভুঞ্জ -বন্ধনে ফিরে এসো!
আমার বক্ষে ফিরিয়া এসো,
আমার চক্ষে ফিরিয়া এসো,
আমার  শয়নে স্বপনে বসনে ভূষণে নিখিল ভুবনে এসো!