পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের সাহিত্য-সম্পং । �Œ ጏ উপাখ্যানভাগ—উভয়ই সোমদেব প্রণীত ‘কথাসরিৎসাগর গ্রন্থের ছায়াবলম্বনে রচিত হইয়াছিল বলিয়া প্রতিপন্ন হয়। এই নাগানন্দ ভিন্ন বৌদ্ধধৰ্ম্ম-সংক্রান্ত নাটক সংস্কৃত-সাহিত্যে আর দৃষ্ট হয় না । সেইজন্ত এক সময়ে নাগানন্দ নাটক বিশেষ আদরণীয় হুইয়াছিল। বৌদ্ধ নাটক বলিতে সাধারণতঃ হিন্দুদিগের প্রতি বিদ্বেষভাবপূর্ণ গ্রন্থ বলিয়া মনে হইতে পারে। কিন্তু এই নাটকের বিশেষত্ব এই যে, হিন্দুদিগের দেবদেবীগণও এই নাটকে সম্মানের আসন প্রাপ্ত হইয়াছেন । জীমূতবাহন—বিদ্যাধরদিগের যুবরাজ। তিনি বয়স্যগণ সন্ত মলয়-পৰ্ব্বতে ভ্রমণ করিতে গিয়াছিলেন। সেখানে গৌরী-মন্দিরে মলয়াবতী গৌরী-পূজায় ব্রতী ছিলেন । মলয়াবতী— সিদ্ধদিগের রাজকুমারী। মলয়-পৰ্ব্বতে পরিভ্রমণকালে গৌরীপূজা-নিরত মলয়াবতীর প্রতি যুবরাজ জীমূতবাহনের দৃষ্টি পতিত হয়। অভিজ্ঞান-শকুন্তল নাটকে, তপোবনে শকুন্তলা সন্নিধানে, সহসা যেমন রাজা কুষ্মন্তের আবির্ভাব হইয়াছিল, গৌরী-মন্দিরে মলয়াবতী সন্নিধানে জীমূতবাহনও সেইরূপভাবে উপস্থিত হইয়াছিলেন। রাজকুমারী এবং তাঙ্কার সহচরীগণ যুবরাজকে সহসা সেখানে দেখিতে পাইয়া অভ্যর্থনা করেন। এই সাক্ষাতেই কুমার ও কুমারী—পরস্পর পরস্পরের প্রতি অনুরক্ত হইয় পড়েন। দুষ্মন্তকে দেখিয়া শকুন্তলার যেমন মোহ উপস্থিত হইয়াছিল, প্রেমানুরাগে মলয়াবতীও সেইরূপ মোহগ্ৰস্ত হন। তখন চন্দনামুলেপনে এবং কদলীপত্র-ব্যজনে মলয়াবতীর মোহাপসারণ করা হয়। ইত্যবসরে জীমূতবাহন তাচার সেই হৃদয়মনহরণকারিণী মলয়াবতীর একখানি ছিত্র অঙ্কিত করেন। চিত্রাঙ্কনকালে রক্তিম রঙের অনুসন্ধান করিয়াছিলেন। তাহাতে র্তাহার সহচরগণ তাঁহাকে কয়েক খণ্ড মৃত্তিক প্রদান করেন। সেই স্মৃত্তিকা দ্বারা নীল, পীত, লোহিত, পাংশুল প্রভৃতি বিবিধ বর্ণের সমাবেশ হয়। এই চিত্রাঙ্কণ-প্রসঙ্গে রং-ব্যবহারের প্রণালীতে প্রাচীন পম্পি-সহরের চিত্রকরদিগের স্মৃতি জাগরুক হয়। তাহারা যেমন মৃত্তিক ও মৃত্তিকভ্যস্তরস্থিত পদার্থের সমবায়ে চিত্রকাৰ্য্য সম্পাদন করিতেন, এই বর্ণনায় সেকালে ভারতবর্ষেও ঐরূপ প্রথার প্রচলন ছিল, বুঝিতে পারা যায়। যাহু: হউক, জীমূতবাহন যখন মলয়াবতীর চিত্র অঙ্কন করেন, মলয়াবতীর তখন মনে হয়,–কুমার যেন আপন প্রেমের পাত্রী অপর কাহারও চিত্র অঙ্কন করিতেছেন। ইহাতে মলয়াবতীর বড় ঈর্ষা হয়। ঈর্ষার আবেগে তাহার মূছ আসে। অতঃপর, উভয়ে উভয়ের অজ্ঞাতসারে পরম্পরের প্রতি প্রাণ সমর্পণের পর, উহঁাদের বিচ্ছেদ ঘটে। তখন মলয়াবতীর পরিচয় কুমার জানিতে পারেন না ; অপিচ, মলয়াবতীর নিকটও কুমারের পরিচয় অপরিজ্ঞাত থাকে। ইতিমধ্যে মলয়াবতীর পিতা মলয়াৰতীর বিবাহের জন্য কুমার জীমূতবাহনের নিকট প্রস্তাব করিয়া পাঠান। কিন্তু জীমূতবাহন সে প্রস্তাবে সঙ্গত হন না। গৌরীদেবীর মন্দিরে তিনি র্যাহাকে দেখিয়াছিলেন, সেই সুন্দরীকে না পাইলে, তিনি আর বিবাহ করিবেন না,—মনে মনে এইরূপ সঙ্কল্প করেন। তিনিও জানিতে পারেন না, রাজাও বুঝিতে পারেন না, যে মলয়াবতীর প্রেমে জীমূতবাহন আত্মহারা, সেই মলয়াবতীর সহিতই ৰিবাহের প্রস্তাৰ চলিতেছিল। কিছুকাল এইরূপ সংশয় সনোহে কাটিয়া যায়। অবশেষে প্রণী:গ্রগৰিনী উভয়েই আপনাদের ভ্রম বুদ্ধিতে পারেন। কুমার জীমূতবাহন